রাশিয়ার সীমানার আরও কাছে দু’টি মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন রয়েছে— বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউজম্যাক্স টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখন রাশিয়ার আরও কাছে। আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকতে চাই। এজন্যই আমি ওই অঞ্চলে দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠিয়েছি।’
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও বলেন, রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব। পুতিন (রুশ প্রেসিডেন্ট) নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় বেশ দক্ষ। তিনি জানেন কীভাবে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প জানান, এর আগে তিনি যুদ্ধ অবসানে ৫০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলেন। তবে পরে সেটি কমিয়ে ১০ দিনে নামিয়ে আনেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, এই সময়ের মধ্যে সমাধান না হলে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য এবং সাবমেরিন মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এর আগে, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের মন্তব্যকে 'উসকানিমূলক' আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, মেদভেদেভের সাম্প্রতিক বিবৃতি এতটাই উসকানিমূলক যে, আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি। কথার প্রভাব গভীর, কারণ অনেক সময় এই ধরনের মন্তব্য অনিচ্ছাকৃতভাবে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। আমি আশা করি, এবার তা হবে না।
এদিকে, সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ও আলটিমেটামের জবাবে ধারাবাহিক হুমকিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন মেদভেদেভ। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তাকে ‘রাশিয়ার ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট’ বলে উল্লেখ করে সতর্ক করে দেন।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে আরও লিখেছেন, ‘মেদভেদেভ এখনো নিজেকে প্রেসিডেন্ট ভাবেন। আমি তাকে বলতে চাই— কথার লাগাম টানুন। তিনি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করছেন।’ ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারির জবাবে মেদভেদেভ তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, ‘ট্রাম্প যেন ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’ সিরিজটা মনে রাখেন। আর ভুলে না যান— সোভিয়েত আমলের ‘ডেড হ্যান্ড’ পারমাণবিক ব্যবস্থা কতটা ভয়ানক ছিল।’
‘ডেড হ্যান্ড’ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি গোপন স্বয়ংক্রিয় প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক ব্যবস্থা। ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আকস্মিক পারমাণবিক হামলার পরও সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাল্টা আঘাত হানতে সক্ষম। যদিও সোভিয়েত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এর অস্তিত্ব স্বীকার করেনি, রুশ কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে এটি মোতায়েন করা হয়েছিল এবং এখনো রাশিয়ার কাছে তা কার্যকর রয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে এক্স ও টেলিগ্রামে একাধিক পোস্টে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন মেদভেদেভ। ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৫০ দিনের সময়সীমা কমিয়ে ১২ দিনে আনার পর মেদভেদেভ বলেন, ‘ট্রাম্প এখন রাশিয়ার সঙ্গে আলটিমেটাম খেলছেন। প্রতিটি আলটিমেটাম যুদ্ধের দিকেই এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে আরও বলেন, ‘উনি যেন ঘুমন্ত জো’র (জো বাইডেন) পথ না ধরেন।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বাকযুদ্ধ কেবল রাজনৈতিক বিতণ্ডা নয়, বরং এর প্রভাব পড়তে পারে বৈশ্বিক কূটনীতিতেও। বিশেষ করে যখন আলোচনায় উঠে আসে পারমাণবিক সাবমেরিন এবং ডেড হ্যান্ডের মতো সংবেদনশীল বিষয়, তখন সেটি নিছক কথার লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না।
তথ্যসূত্র : এপি, নিউজ ম্যাক্স টিভি ও মেহের নিউজ।
বিডি-প্রতিদিন/শআ