প্রবাসী নাজির হোসেনের স্ত্রী মরজিনা আক্তার রেনু (৪৫) তার বোন ও দুই সন্তানকে নিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। কে জানত অসুখে মৃত্যু নয়, প্রকৃতি তাদের কপালে রেখেছে রেলের ধাক্কায় মৃত্যু হবে। ফেরার পথে একটি রেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যায় তাদের বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি। এ সময় অটোরিকশাটি ট্রেনের সামনের অংশে আটকে গেলে ট্রেনটি টেনে নিয়ে যায় অনেক দূরে, এরই মধ্যে চালকসহ পাঁচজনই প্রাণ হারায়। ১ কিলোমিটার পর্যন্ত রেললাইনে পাঁচজনের ছিন্নভিন্ন নিথর দেহ পড়ে থাকে। সঙ্গে থাকা মরজিনা আক্তারের আইডি কার্ড দেখে তাদের শনাক্ত করে এলাকাবাসী। কক্সবাজারের রামু উপজেলার রামুর রশিদনগর রেলক্রসিংয়ে গতকাল দুপুর ২টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত মরজিনা আক্তার রেনু ও আসমাউল হোসনার পিতা জাফর আলম জানান, তাঁর দুই মেয়ে ও দুই নাতিসহ আসমাউলের শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিল। এ সময় তাঁদের অটোরিকশাটি ধলিরছড়া রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় চট্টগ্রামমুখী একটি ট্রেনে কাটা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই সিএনজিচালক হাবিব উল্লাহসহ সবাই নিহত হয়। অন্যদিকে বারবার একই স্থানে দুর্ঘটনা ঘটায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা রেললাইন অবরোধ করে রাখে। দুর্ঘটনার পর ট্রেনটি গন্তব্যে চলে গেলেও, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজারগামী অপর একটি ট্রেনকে ঘটনাস্থলে আটকে রেখে বিক্ষোভ করেছে ক্ষুব্ধ জনতা। বেলা আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্থানীয় জনতা সেটাকে আটকে দেয়। তারা লাশ উদ্ধার না হওয়া এবং আলোচিত পানিরছড়া-ভারুয়াখালী রেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান দেওয়ার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ট্রেনটি ছেড়ে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে র্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিকাল ৫টার কিছু পরে ট্রেনটি কক্সবাজারের দিকে ছেড়ে যায়।
এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তর। কমিটিতে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা, সহকারী যান্ত্রিক প্রকৌশলী ও সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্য করা হয়।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, র্যাব, পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে ও এলাকাবাসীকে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৈয়বুর রহমান জানান, রামু উপজেলার রশিদনগরের পানিরছড়া-ভারুয়াখালী রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি ছিটকে যায়। এতে চালক ঈদগাঁও উপজেলার মেহেরঘোনার ছৈয়দ নুরের ছেলে হাবিব উল্লাহ (৪৮), অটোরিকশার যাত্রী পোকখালী ইউনিয়নের পূর্ব গোমাতলী এলাকার নাজির হোসেনের স্ত্রী মরজিনা আক্তার রেনু (৪৫) তাঁর বোন আসমাউল হুসনা (১৬), রেনুর তিন বছর বয়সি আশেক উল্লাহ ও দেড় বছর বয়সি ছেলে আতা উল্লাহ নিহত হয়। আসমাউল হুসনা (১৬) কোরআনে হাফেজ বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।