হেমন্তের বিদায় এবং শীতের আগমনি বার্তা প্রকৃতিতে এক স্নিগ্ধ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যদিও শহুরে জীবনে শীতের আমেজ কিছুটা দেরিতে আসে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, তাপমাত্রা এখন সারা দেশেই কমতে শুরু করেছে, যা রাজধানী ঢাকাতেও শীতের অনুভূতি বাড়াচ্ছে। সামনে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে, আর সেই সঙ্গে শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী- আলমারি থেকে বেরিয়ে আসছে গরম পোশাক, বদল আসছে খাদ্যাভ্যাসে।
কিন্তু শীতের এই আগমন অনেকের জীবনে নিয়ে আসে অলসতা। বিশেষ করে যারা একটু বেশি শীতকাতুরে, তাদের জন্য বিছানা ছেড়ে শরীরচর্চায় মন দেওয়া যেন এক অসম্ভব কাজ। সারা বছরের নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাসও অনেকে ‘প্রচণ্ড শীতের’ বাহানায় ছেড়ে দেন। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকাল শরীরচর্চার জন্য খুবই ভালো সময়। ব্যায়াম শীতের জড়তা ও আলস্য দূর করে শরীরে গতি ফিরিয়ে আনে, যা দৈনন্দিন কাজকর্মেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সময়ে সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগার সমস্যায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও সুস্থ থাকতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম অত্যাবশ্যক হলেও, শীতকালে তারা প্রায়শই বিপদে পড়েন। কুয়াশামাখা ভোর, ধুলাবালু এবং বায়ুদূষণের কারণে বাইরে হাঁটা বা দৌড়ানো বয়স্ক ব্যক্তি এবং হাঁপানি রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, ব্যায়াম বন্ধ রাখতে হবে। বরং এই সময়ে প্রয়োজন কৌশলী হওয়া ও বাইরে না গিয়ে ঘরেই শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা।
সাধারণত তিন ধরনের ব্যায়াম করা হয়- কার্ডিওভাস্কুলার, ম্যাস্কুলার ও জয়েন্ট স্ট্রেচিং। তবে শীতকালে ওয়ার্মআপ করা কঠিন হওয়ায় ব্যায়ামের ধারায় ভিন্নতা আনতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে কার্ডিওভাস্কুলার (যেমন- স্পট জগিং, স্কিপিং, সাইকেলিং), এরপর ম্যাস্কুলার (যেমন- বুকডন, ওঠাবসা, হালকা ডাম্বেল তোলা) এবং সবশেষে জয়েন্ট স্ট্রেচিং (যেমন- যোগব্যায়াম, সূর্যপ্রণাম, প্রাণায়াম) করা সবচেয়ে কার্যকর। কার্ডিওভাস্কুলার ব্যায়াম দিয়ে শুরু করলে শরীর দ্রুত উষ্ণ হয় এবং অন্যান্য কঠোর ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত হয়। যারা জিমে না গিয়ে ঘরেই ব্যায়াম করতে চান, তারা স্পট জগিং বা অ্যারোবিকস করতে পারেন। এ ছাড়া শীতকালে ঘাম ঝরানোর জন্য ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল বা টেবিল টেনিসের মতো ইনডোর গেম খেলাও একটি চমৎকার বিকল্প। এগুলো কেবল শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ায় না, বরং মনকেও ফুরফুরে রাখে।
শরীরচর্চার সময় কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। শীতের সকাল বা সন্ধ্যায় ব্যায়ামের সময় অবশ্যই ফুলহাতা জার্সি ও উপযুক্ত ট্রাউজার বা ট্র্যাকস্যুট পরা উচিত। পায়ে ব্যায়ামের উপযোগী কেডস ব্যবহার করতে হবে। ব্যায়াম করার সময় শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে পানি বেরিয়ে যায়, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করা আবশ্যক। এ ছাড়াও, হাঁটা বা দৌড়ানোর পরে কিছুক্ষণ স্ট্রেচিং করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি পেশিকে চোট-আঘাতের কবল থেকে দূরে রাখে এবং বাড়তি ওজন ঝরানোর ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে। শীতের আলস্যকে দূরে ঠেলে নিজেকে সুস্থ ও কর্মঠ রাখতে শীতকালেও শরীরচর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
আর হ্যাঁ, ব্যায়ামের পোশাক হতে হবে এমন যা আরামদায়ক, নমনীয় এবং ঘাম শোষণ ও শুকানোর উপযোগী। দ্রুত শুকিয়ে যায় এমন ফ্যাব্রিক- যেমন পলিয়েস্টার, নাইলন বা টেকনিক্যাল ফ্যাব্রিক- ব্যায়ামের সময় সবচেয়ে কার্যকর। সুতির পোশাক এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ তা ঘাম শোষণ করলেও সহজে শুকায় না।
পোশাকের ফিটিংও গুরুত্বপূর্ণ- খুব টাইট হলে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়, আর খুব ঢিলেঢালা হলে নড়াচড়ায় বাধা দেয়। শীতকালে শরীর উষ্ণ রাখতে ফুলহাতা জার্সি ও হালকা স্তরযুক্ত পোশাক পরা উচিত; গ্রীষ্মে হালকা, বায়ু চলাচলযোগ্য পোশাক আরামদায়ক। ব্যায়ামের ধরন অনুযায়ী জুতা নির্বাচন জরুরি- দৌড়ের জন্য রানিং শু, ভারোত্তোলনের জন্য ফ্ল্যাট-সোল জুতো। নারীদের জন্য স্পোর্টস ব্রা ও ঘাম শোষণকারী মোজা প্রয়োজন। সঙ্গে তোয়ালে রাখুন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই