পিঁয়াজের বাজারে শুরু হয়েছে ব্যাপক কারসাজি। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পিঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত। যেখানে এক সপ্তাহ আগেও মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৮০-৯০ টাকায়, এখন সেটা খুচরায় ১০০-১১০ টাকায় পৌঁছেছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতির চেয়ে পরিকল্পিতভাবে সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই এই দাম বাড়ানো হয়েছে। কারণ সরকারি হিসাবে দেশে পর্যাপ্ত পিঁয়াজ মজুত আছে, এমনকি চাহিদার চেয়ে উৎপাদনও বেশি। তারা মনে করেন, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাবই এখন মূল সমস্যা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বছরে ৩৫ লাখ টন পিঁয়াজের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টন। তবু বেশি মুনাফার লোভে পিঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে জমা পড়েছে প্রায় ৩ হাজার আমদানি অনুমতি (আইপি) আবেদন। স্থানীয় কৃষককে সুরক্ষা দিতে সেসব আইপি আবেদন স্থগিত রেখেছে মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে পিঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। তাই আমদানি করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া নভেম্বর মাসেই বাজারে নতুন পিঁয়াজ বাজারে আসবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সবকিছু নজরদারির ওপর রাখছি। নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েকটি উপজেলায় বৃষ্টি হয়েছিল। সেটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে হয়তো অনেক ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকটের চেষ্টা করছেন। বেশি সংকট হলে মজুত রাখা পিঁয়াজ বাজারে ছাড়া হবে। কৃষকের কাছে যে পিঁয়াজ মজুত আছে সেগুলো বাজারে ছাড়লেই দাম আবারও কমে আসবে।
এদিকে গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব দোকানেই দাম বাড়ার চাপ। পাইকারিতে এক পাল্লা (৫ কেজি) পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪২০-৪৫০ টাকা, যা পাঁচ দিন আগেও ৩৩০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পিঁয়াজের দাম হঠাৎই বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে এমন হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি তাদের দৈনন্দিন জীবনে নতুন চাপ তৈরি করেছে।
নাসরিন জাহান নামে এক গৃহিণী বলেন, গত সপ্তাহে ৮০ টাকায় পিঁয়াজ কিনেছি, আজ ১১০ টাকা চাইছে। এভাবে প্রতিদিন একেকটা জিনিসের দাম বাড়লে সংসার কেমনে চলে? খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তদাররা পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। শাহীন মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা আড়ত থেকেই ৯০ টাকায় কিনছি। সরবরাহ কমে গেছে, তাই বিক্রি করছি ১০০ টাকায়। এই অবস্থায় আর কিছু করারও নেই। শান্তিনগর বাজারেও একই অবস্থা। সেখানকার মুদি দোকানদার রুবেল হোসেন বলেন, পাঁচ দিন আগেও ৮০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন খুচরায় ১১০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বলছেন, আমদানির অনুমতি না পেয়ে তারা বাধ্য হচ্ছেন বেশি দামে কিনতে। কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো মনে করছে, সেটি কৃত্রিম সংকট তৈরির অজুহাত।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজারে সরবরাহ কম। পিঁয়াজ যে পরিমাণ আসছে সেটা যথেষ্ট নয়। মন্ত্রণালয় থেকে আমদানি করার আবেদনও স্থগিত করে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ সংকট তৈরি হয়েছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মজুত করে কৃত্রিম সংকট দেখাচ্ছেন। এ চক্রকে থামাতে হলে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার।