মুম্বাই পুলিশ সম্প্রতি ‘ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী’ সেজে থাকা এক ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগ, আখতার হুসাইনি কুতুবুদ্দিন আহমেদ নামের ওই ব্যক্তি এবং তার ভাই আদিল হুসাইনি (৫৯) বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বা গবেষণা অংশীদারিত্বর আড়ালে ইরানের বিভিন্ন সংস্থার কাছে পারমাণবিক সংক্রান্ত একটি নকশা বিক্রির চেষ্টা করছিলেন।
তদন্তকারী সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, অভিযুক্ত দুই ভাই ভিপিএন এবং এনক্রিপ্টেড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একটি তথাকথিত লিথিয়াম-৬ রিয়্যাক্টরর নকশা বিক্রির চেষ্টা করছিল। মার্চ ও এপ্রিল মাস নাগাদ তারা তেহরান সফর করে। পাশাপাশি ভারতে এবং দুবাইয়ে অবস্থিত ইরানি দূতাবাসেও তারা একাধিকবার যায়। তারা মুম্বাইয়ে থাকা এক ইরানি কূটনীতিককেও প্রতারিত করে, নিজেদের বিএআরসির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচয় দেয় এবং ভুয়া রিয়্যাক্টর ব্লু-প্রিন্ট দেখায়।
অভিযুক্তরা ইরানি কোম্পানিগুলোর কাছে দাবি করে, তারা প্লাজমা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি লিথিয়াম-৬ ভিত্তিক ফিউশন রিয়্যাক্টরের প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে। তারা আরও দাবি করে, লিথিয়াম-৭ ব্যবহার করে তারা একটি রিয়্যাক্টর পরীক্ষা করেছিল। কিন্তু প্লাজমা হিটিং ফেইলিয়রের কারণে সেটি ব্যর্থ হয়।
তবে তদন্তের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের উল্লেখিত প্রোটোটাইপটি তাত্ত্বিকভাবে তৈরি হলেও এর কার্যকারিতার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। লিথিয়াম-৭ কোনো ফিউশন প্রক্রিয়ার জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে উপযুক্ত নয়।
সূত্র বলছে, দুই অভিযুক্ত তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর ফিজিক্স, আইসোটোপ কেমিস্ট্রি এবং প্লাজমা ডায়নামিক্সের মতো জটিল বৈজ্ঞানিক শব্দ ব্যবহার করত। এই কারণে, তাদের বক্তব্য বোঝার জন্য প্লাজমা ফিজিক্স এবং নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে হয়েছে।
আখতারকে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর থেকে মুম্বাই পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার ভাই আদিলকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। আখতারের কাছ থেকে ১০টিরও বেশি মানচিত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত তথ্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, একাধিক ভুয়ো পাসপোর্ট, আধার ও প্যান কার্ড এবং বিএআরসির একটি জাল আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্তরা ১৯৯৫ সাল থেকে বিদেশ থেকে অর্থ গ্রহণ করতে শুরু করে। প্রথমে তারা লক্ষাধিক টাকা পেলেও ২০০০ সালের পর থেকে কোটির অঙ্কে টাকা পেতে শুরু করে। পুলিশের সন্দেহ, বিএআরসি এবং অন্যান্য পারমাণবিক প্ল্যান্টের গোপন ব্লু-প্রিন্টের বিনিময়ে এই টাকা দেওয়া হত।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল