মাত্র চার দিনের ব্যবধানে আবারও ভারতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। এবারের বিস্ফোরণ ঘটেছে জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের নওগাম পুলিশ থানায়। এতে ৯ পুলিশ নিহত এবং অন্তত আরও ৩০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের দেহাংশ ৩০০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে। থানায় জমিয়ে রাখা গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক থেকে অসাবধানবশত এ বিস্ফোরণ ঘটেছে, নাকি নাশকতা; সে বিষয়ে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়।
শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে সর্বশেষ এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে গতকাল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ফরিদাবাদ সন্ত্রাসী মডিউল মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছিল। গভীর রাতে সেই জব্দ বিস্ফোরক পদার্থ থেকে নমুনা সংগ্রহ করছিল পুলিশ, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। তখনই এ বিস্ফোরণ ঘটে। নিহতের বেশির ভাগই পুলিশ এবং থানায় কর্মরত ফরেনসিক কর্মকর্তা। আহতের মধ্যে তিনজন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন। তাদের শ্রীনগরের ৯২ বেস হাসপাতাল এবং শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসসহ (এসকেআইএমএস) একাধিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পারিপার্শ্বিক তথ্যানুযায়ী, রাত ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ এ বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং এলাকার সিসিটিভি ক্লিপগুলোতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের ফলে পুলিশ স্টেশনের একটি ভবন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে এবং তা থেকে আগুন ঘন ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। বিস্ফোরণে থানাসংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটে। সূত্র জানান, আহতের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং কয়েকজন এখনো নিখোঁজ থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে ৩০০ ফুট দূরেও লাশের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা থেকে পরিষ্কার বিস্ফোরণের তীব্রতা কত মারাত্মক ছিল। যদিও পুলিশের অভিমত এ বিস্ফোরণের পেছনে দুটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। তা হলো অসাবধানতা এবং সন্ত্রাসী হামলা। পুলিশ সূত্র বলছেন, সম্ভাব্য দুটি দিক থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। একটি সম্ভাবনা হলো, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে জব্দ ওই বিস্ফোরক সিলিংয়ের সময় কোনোভাবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জ্বলে উঠেছিল। কারণ পুলিশ এবং ফরেনসিক দল ফরিদাবাদ সন্ত্রাসী মডিউলের সদস্য চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল গনির ফরিদাবাদের ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৫০ কেজির বেশি বিস্ফোরকদ্রব্য। ওই বিস্ফোরকের বেশির ভাগই থানার ভিতরে মজুত করা হয়েছিল। উদ্ধারকৃত কিছু রাসায়নিক পদার্থ পুলিশ ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু বেশির ভাগ অংশই স্টেশনেই রয়ে গিয়েছিল। যেহেতু এ থানাতেই প্রথম এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, তাই পুরো বিস্ফোরক পদার্থই এখানে মজুত রাখা ছিল। দ্বিতীয়ত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও হতে পারে। কারণ এরই মধ্যে জঙ্গি সংগঠক জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে যুক্ত একটি ছায়া সংগঠন পিএএফএফ এ বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে।
পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণের পর গোটা এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী কুকুর নিয়ে পুরো এলাকা তল্লাশি চালায়। নওগাম পুলিশ থানার এ বিস্ফোরণের তদন্তভার দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এনআইএ)।