‘বাংলাদেশের সুষম নগরায়ণ ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ : নীতি ও পরিকল্পনা প্রস্তাবনা’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা বলেছেন, ঢাকাকেন্দ্রিক আমাদের সামগ্রিক কার্যক্রম। চাকরির পেনশন ওঠাতে ঢাকা, বিচারিক কার্যক্রমে ঢাকা ও চিকিৎসা নিতেও ঢাকায় আসতে হয়। একজন মেয়র সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প নেবেন সেটাও ঢাকা থেকে অনুমোদন দিতে হচ্ছে। এক ঢাকার ওপর এত চাপ! ঢাকার ওপর চাপ কমাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। এই বিকেন্দ্রীকরণে দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা। কারণ দলগুলোই সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করে থাকে। দলগুলোর সুষ্ঠু পরিকল্পনায় সুষম উন্নয়ন হতে পারে। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে প্লেনার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খানের সভাপতিত্বে সংলাপে অংশ নেন এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, থাইল্যান্ডের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ টি এম নুরুল আমিন, বিআইপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিনিয়র প্ল্যানার মাকসুদ হাসেম, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফৌজিয়া ফারজানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা, বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড (ডিডিসি) পরিচালক মাহবুবুর রহমান, বিআইপির যুগ্ম সম্পাদক তামজিদুল ইসলাম প্রমুখ।
অধ্যাপক ড. এ টি এম নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে আয় বৈষম্যের অন্যতম কারণ হলো অর্থনীতিভিত্তিক এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা। প্রতিটি ফেডারেল শাসনব্যবস্থামূলক দেশে প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব পরিষদ, আইনসভা ও মুখ্যমন্ত্রী থাকার ফলে একটি কাঠামো তৈরি হয় যা বিকেন্দ্রীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করে। এর ফলে রাজনৈতিক চাপ হ্রাস পায় এবং শহরের নগরায়ন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা পাওয়া যায়। তিনি মনে করেন, এভাবে বাংলাদেশেও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সুষম নগরায়ন ও পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিনিয়র প্ল্যানার মাকসুদ হাসেম বলেন, সব প্রশাসনিক কাঠামোকে সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব নয়। জলবায়ু-প্রবণ মানুষদের নগরমুখী প্রবণতা ঠেকাতে রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি সুষম অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘ন্যাশনাল স্প্যাশিয়াল প্ল্যানিং’ আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে তৈরি করা হবে।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সারা দেশে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য। তিনি উল্লেখ করেন, অঞ্চলভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি না হলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কার্যকর করা কঠিন হবে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করলে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। রাষ্ট্র যদি অঞ্চলভিত্তিক সুষম শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে, তবে রাজধানীসহ প্রধান শহরগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের পরিবার ঢাকায় থাকেন। সারা দেশের মানুষ চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে ঢাকার ওপর নির্ভরশীল। সারা দেশ থেকে মানুষ আসেন। রাজনৈতিক নেতারা ঢাকা থেকে জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রশাসনের ক্ষেত্রেও তাই। এসব কারণে ঢাকায় মাত্রাতিরিক্ত চাপ রয়েছে; যা পরিকল্পনার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন।