গোপালগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানের সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে বাস-ইজিবাইক সংঘর্ষে নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রাজারহাট, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাড়েরহাটের শরণখোলা এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস ও ইজিবাইক মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় ১০ বছরের এক শিশুও আহত হয়েছে। শিশুটিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতী বাসস্ট্যান্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- মাদারীপুর জেলার কালকিনী উপজেলার উত্তর রঞ্জনপুর গ্রামের মোতালেব পাইক (৭৫) ও তার স্ত্রী দেলোয়ারা (৬৫), অজ্ঞাত (৩৫), ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার হেলেঞ্চা গ্রামের আবদুুর রাজ্জাক শেখের ছেলে ওবায়দুর শেখ (৫০)। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা থেকে ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ইজিবাইকে থাকা পাঁচ যাত্রী গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে কাশিয়ানী উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোতালেব পাইক (৭৫), তার স্ত্রী দেলোয়ারাকে (৬৫) মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠালে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আফতাব জিলানী ওবায়দুর শেখ (৫০) ও অজ্ঞাত (৩৫) ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ইট ভাঙা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে আপন দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকালে উপজেলার নাজিম খান ইউনিয়নের মমিন বকশিপাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন আবদুুল হক (৬৫) ও তাজরুল ইসলাম (৫৫)। তারা রাজারহাট সদর ইউনিয়নের কৌলাস কুঠি এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নিহত দুই ভাই কাজ শেষ করে বিকালে ইট ভাঙা গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় নাজিম খান ইউনিয়নের মমিন বকশি এলাকায় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। তখন ঘটনাস্থলেই এক ভাই মারা যান। অপরজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনিও মারা যান।
চট্টগ্রাম : কর্ণফুলী টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে গোলচত্বর এলাকায় বাসচাপায় মাইক্রোবাসের চালক মোহাম্মদ সোহেল নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদ সোহেল (৪০) উপজেলার বারশত ইউনিয়নের কালীবাড়ি এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে। তিনি বৈরাগে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। জানা গেছে, মোহাম্মদ সোহেল গাড়িতে ওঠার জন্য রাস্তা পার হওয়ার সময় বাস তাকে চাপা দেয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাতে মইজ্জারটেক চত্বরে স্থানীয় চালক ও যাত্রীরা বিক্ষোভ করেন। দুর্ঘটনার পর বাস নিয়ে পালানোর চেষ্টাকালে শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজা থেকে চালক কবির হোসেন (৪২) ও তার সহকারী সাগর আহমদকে (২২) আটক করে পুলিশ। কবিরের বাড়ি জামালপুর এবং সাগরের বাড়ি টাঙ্গাইলে। আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন জানান, বাসচালক ও সহকারীকে আটক করা হয়েছে।
বাগেরহাট : বাগেরহাটের শরণখোলা গ্রামীণ সড়কে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় শাহজাহান হাওরাদার (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় চালক শাকিল হাওলাদারও গুরুতর আহত হন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের বড়ইতলা মসজিদের সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শরণখোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য দুজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে দুপুর ২টার দিকে বৃদ্ধ কৃষক শাহজাহান মারা যান। আহত মোটরসাইকেল চালক শাকিলকে খুলনা মেডিকে লে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ তাফালবাড়ী এবং আহতের বাড়ি সোনাতলা গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহজাহান হাওলাদার নিজরে জমিতে সার ও কীটনাশক দিয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে সড়কে ওঠেন। এমন সময় শাকিল বেপরোয়া গতিতে মোটরসাকেল চালিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় বৃদ্ধের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে তারা দুজনই গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে শরণখোলা হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ইটবোঝাই ট্রলির ধাক্কায় লাকি খাতুন (১৩) নামে এক বাক প্রতিবন্ধী কিশোরী নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ফুলপুকুরিয়ার কাদুনিপুকুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত লাকি খাতুন ওই এলাকার আবু নুসার মেয়ে।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকালে রাজবাড়ী-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের আলাদীপুর এলাকায় নসিমন ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- সাহিদা খাতুন (৭২) ও অনিক (২২)। নিহত সাহিদা খাতুন রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলাদিপুর গ্রামের আমির উদ্দীন সরদারের স্ত্রী এবং অনিক খানখানাপুর মিয়াপাড়া এলাকার জাকির হোসেন মিয়ার ছেলে। স্থানীয়রা জানান, দুপুরে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় বাঁশবোঝাই নসিমন সাহিদা খাতুনকে ধাক্কা দেয়। তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুরে প্রেরণ করেন। পথেই তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে বিকালে সদর উপজেলা আলিপুর ইউনিয়নের নসিমন ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী অনিক মিয়া নিহত হন।
হবিগঞ্জ : ঢাকা সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মাদরাসা ছাত্রসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। তারা হলেন- মাধবপুরের হযরত শাহজালাল (র.) আলিম মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফেজ আশরাফুল ইসলাম মুরাদ (১৬), তার ফুফাতো ভাই ইমন মিয়া (১৭) ও শসিন দাস পানিকা (২৮)।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রতনপুর ডাক্তারবাড়ি গেট এলাকায় ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মাদরাসা ছাত্র আশরাফুল নিহত হন। গুরুতর আহত ইমনকে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডল গ্রামের বাসিন্দা।
অপরদিকে- ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণপুর এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটর সাইকেল আরোহী ও কারখানা শ্রমিক শসিন দাস পানিকা (২৮) নিহন হয়। নিজ কর্মস্থলে কারখানায় যাওয়া পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। নিহত শসিন দাস পানিকা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা চা বাগানের বাসিন্দা বালক দাস পানিকার ছেলে। তিনি মাধবপুরের সুরমা চা বাগানে দুলাভাইয়ের বাড়িতে থেকে স্থানীয় এক শিল্পকারখানায় চাকরি করতেন বলে জানা গেছে।
আঞ্চলিক মহাসড়কে অবৈধ গাড়ির চাপায় দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যতে হাইওয়ে পুলিশের কর্মকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত তিন দিনে এ মহাসড়কে শুধু ইঞ্জিনচালিত নসিমনচাপায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
আহলাদিপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামিম শেখ বলেন, পৃথক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের লাশ আইনি প্রক্রিয়া মেনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।