গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে অনেকেই গনিমতের মাল বিবেচনা করছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট, স্বেচ্ছাচারিতা চালাবার লাইসেন্স নয়। কোনো মব সন্ত্রাসীকেই সরকার বা রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন বিলম্বিত হলে এই নৈরাজ্য আরও বাড়বেম অন্যদিকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তী-বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আবদুন নূর-এর সভাপতিত্বে এ সভায় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক উত্তরণে জুলাই সনদ প্রণয়নে কাজ করছে। ক্ষমতা দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট, স্বেচ্ছাচারিতা চালাবার লাইসেন্স নয়। কোনো ব্যক্তিই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগকে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। জবাবদিহি না-করার জন্যই প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করা হয়েছে। ব্যক্তির ভালত্ব নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে হবে।
সাইফুল হক বলেন, ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ অভ্যুত্থানে পরিবর্তনের স্বপ্নকে কারও স্বার্থে জলাঞ্জলি দেওয়া যাবে না। গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে অনেকেই ‘গনিমতের মাল’ হিসেবে বিবেচনা করে যা খুশি তাই করছেন। তিনি বলেন, বিশ্বজিৎ আর আবরার ফাহাদের হত্যার সঙ্গে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগের হত্যার পার্থক্য কোথায়? তিনি আরও বলেন, সরকারের অকার্যকারিতায় মব সন্ত্রাস বাড়ছে। রাজনৈতিক লুম্পেন ও মাফিয়া সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কোনো দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে এই নৈরাজ্য আরও বাড়বে অন্যদিকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সোহাগের হত্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, অথচ ১০০ মিটারের মধ্যে আনসার ক্যাম্প ছিল, পুলিশের থানা ছিল তারা কী করল?’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের কথা বললেই বলা হয় সংস্কার। ১২ মাসের বাংলাদেশ নিরাপদ না। দেশকে অনেক পেছনে নিয়ে গেছে।’ যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে ততটুকু দিয়েই নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাকিটা নির্বাচনে জনগণ ঠিক করবে।’
বক্তরা বলেছেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাকে কোনোভাবেই বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। কারও কোনো হঠকারিতা, বাড়াবাড়ি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে গণ অভ্যুত্থানের অসাধারণ অর্জন বিসর্জন দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক দল ও জনগণের ন্যূনতম ঐক্য ধরে রাখতে হবে। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুল মজিদ আতাহারী, বাসদ (মার্কসবাদী) এর সমন্বয়কারী মাসুদ রানা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, আহত জুলাই যোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফায়েজুর রহমান মনির প্রমুখ।