স্বজনদের সঙ্গে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। গতকালও বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে ফিরেছেন অসংখ্য মানুষ। ভোর থেকেই রাজধানীর কমলাপুর, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ফিরে আসা মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। আকাশপথেও মানুষ ঢাকায় ফিরেছেন। ঢাকায় ফিরতি যাত্রায় জলপথ, রেলপথ, সড়কপথ এমনকি আকাশপথেও
যাত্রীদের পকেট কাটা হচ্ছে। লঞ্চ, বাস, বিমান বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। এখন বৈধ পথে রেলের ফিরতি টিকিট না মিললেও ব্ল্যাকারের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ গুণ টাকায় টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। বিমানের ভাড়া যেখানে ৫-৬ হাজার টাকা ছিল সেখানে ভাড়া দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। জল, স্থল ও আকাশ পথে কাটা হচ্ছে যাত্রীর পকেট।
রাজশাহী থেকে গতকাল দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের এসি বাসে ঢাকায় আসেন শামসুল হুদা। তার কাছ থেকে এসি বাসের টিকিটের দাম নেওয়া হয়েছে ২ হাজার টাকা। এর আগে সচরাচর দেশ ট্রাভেলসের এসি গাড়ির ভাড়া ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। শ্যামলী পরিবহনের ঢাকা-রাজশাহীর নন এসি গাড়ি ভাড়া ৭০০-৮০০ টাকা। সেই ভাড়া এখন ১ হাজার ২০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রংপুর থেকে নাবিল পরিবহনে ঢাকায় ফিরেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফাহাদ হোসেন। তিনি জানালেন, আগে ৮০০ টাকা ভাড়া নিলেও ঈদ মৌসুমে ভাড়া নিয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। শুধু নাবিল পরিবহনই নয়, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল থেকে আসা প্রতিটি গাড়িই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। বরিশাল, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম থেকে আসা বাসগুলোতেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সোহেল রানা ঈদের পর ঢাকায় আসতে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য একাধিকবার অনলাইনে চেষ্টা করেও সফল হননি। গতকাল স্থানীয় উল্লাপাড়া স্টেশনে যান। সেখানে টিকিট ব্ল্যাকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন গুণ দামে পেয়ে যান এসির টিকিট। তিনি জানান, স্থানীয় ব্ল্যাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৪০০ টাকার টিকিট মিলেছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, খুব বেশি যাত্রীর চাপ ছিল না। নির্বিঘ্নে ঢাকায় ফিরছে মানুষজন। নৌপথে যাত্রীদের চাপ থাকলেও ঝুঁকিঝামেলা ছাড়াই ফিরছে মানুষ। তবে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাসের পাশাপাশি ট্রাকেও ঢাকায় ফিরেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সিরাজগঞ্জ রোড থেকে ছোট ট্রাকে ৪০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাইপাইল আসেন পোশাক শ্রমিক সাইফুল মিয়া। তিনি বলেন, কোনো বাস খালি নেই।
আবার ভাড়াও নিয়েছে দ্বিগুণ-তিন গুণ। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকে এসেছি।
জানা গেছে, যাত্রীচাপ পুঁজি করে পরিবহন শ্রমিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করেছে। বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি না হওয়ায় অনেক যাত্রী শ্রমিকদের হাতে নাজেহাল হয়েছেন। এদিকে যাত্রীদের পকেট কাটা হচ্ছে আকাশ পথেও। দেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএসবাংলা ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল-এই আটটি পথে তাদের প্রতিদিন শতাধিক ফ্লাইট চলাচল করে। সৈয়দপুর থেকে আগে সাধারণত ৬ হাজারে যে ভাড়া নেওয়া হতো, ঈদের পর তা এখন ১২ হাজার, ১১ হাজার, সাড়ে ৮ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল সৈয়দপুর বেসরকারি একটি এয়ারলাইনসে ঢাকায় ফেরেন রনি আহমেদ। তিনি বলেন, সৈয়দপুর সব সময়ই যাত্রীদের চাপ থাকে। সে কারণে পথ কম হলেও ভাড়া বেশি রাখে বেসরকারি বিমানগুলো। গতকাল ১১ হাজার ২১৭ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে ঢাকায় ফিরেছেন তিনি।