এখন থেকে বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বা মালিকরা চাইলেই কাউকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন না। শুধু বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে পারবেন। ঋণ খেলাপিরা সিইও পদের অযোগ্য বিবেচিত হবেন, থাকতে হবে বিমা খাতে কাজের ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের অর্থ রক্ষা করার কথা বিমা কোম্পানির কিন্তু অনেক কোম্পানি করেছে সম্পূর্ণ বিপরীত। অভিযোগ আছে, অনেক প্রতিষ্ঠান অর্থ বিনিয়োগের নামে আত্মসাৎ করেছে।
এতে সরাসরি সহায়তা করেছেন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও)। তবে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইডিআরএ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে দেশের বেশ কয়েকটি বিমা কোম্পানি ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। কোম্পানিগুলো বলছে, যোগ্য সিইও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই যোগ্য খুঁজতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের মতো বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনা করছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা প্রার্থীর লাইফ বিমা কোম্পানি অথবা নন-লাইফ বিমা কোম্পানিতে কাজ করার ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়াও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সব অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি আইডিআরএতে জমা দিতে হবে। এ ছাড়াও প্রার্থীর সবশেষ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সনদ অথবা প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি, ঋণ খেলাপি নন প্রার্থীর এমন হলফনামার কপি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ইনকোয়রি ফরম-১ পূরণ করে মূল কপি আইডিআরএতে জমা দিতে হবে। প্রতিবছর জুলাই এবং জানুয়ারি মাসে নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা তালিকাভুক্ত হবেন। আইডিআরএর এমন উদ্যোগের ফলে এখন থেকে কোনো বিমা কোম্পানি চাইলেও নিজের পছন্দের প্রার্থীকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে আইডিআরএর মিডিয়া এবং যোগাযোগ পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক বিমা কোম্পানি ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়ে চলছে। সিইও নিয়োগ দেওয়ার কথা বললে কোম্পানিগুলো বলে যোগ্য লোক নেই। তাই যোগ্য সিইও খুঁজতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থতার কারণে ২০২৪ সালের শেষে দেশের বিমা খাতে প্রিমিয়াম সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২৩ সালে এর হার ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিমা খাতে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ হয়েছে ১৮ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা, যা আগের বছর ২০২৩ সালে ছিল ১৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। এ বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান আসলাম আলম বলেন, ‘ঋণের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকরা যেমন টাকা তুলে নিয়েছেন, তেমনি ছয়টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মালিকরা বিনিয়োগের নাম করে গ্রাহকদের জমা করা প্রিমিয়ামের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কাগজে-কলমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের কথা বললেও বাস্তবে তারা কোথাও তা বিনিয়োগ করেনি।’