৩০/৩১ মার্চ যশোর ক্যাম্পের পাকসেনারা কুষ্টিয়া দখল করে। এ খবর শুনে মেহেরপুর এসডিও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ট্রেজারিতে থাকা বন্দুক আনসার মুজাহিদের হাতে তুলে দিয়ে কুষ্টিয়ায় যুদ্ধে পাঠান। মেহেরপুর তখনো শত্রুমুক্ত। এদিকে এসডিও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও আনসার অ্যাডজুটেন্ট আকবর আলী মিলে ছাত্র-জনতাকে একত্র করে মেহেরপুর হাইস্কুল মাঠে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সে সময় আমি মেহেরপুর সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আমিও তৌফিক-ই-ইলাহীর উৎসাহে উজ্জীবিত হয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করি। আমাদের থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে শক্রবাহিনী মেহেরপুরে আক্রমণ করে। আমরা মেহেরপুর ছেড়ে ভারতের হৃদয়পুর ইয়ুথ ক্যাম্পে চলে যাই, সেখানে প্রশিক্ষণ শেষ করে ভারতের বিহারের চাকুলিয়ায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এরপর দেশে এসে দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
মেহেরপুরের যুদ্ধটা ছিল মূলত গেরিলা আক্রমণ। দীর্ঘ ৯ মাস খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি। মেহেরপুর এসডিও তৌফিক-ই-ইলাহী ক্যাপ্টেন পদবি লাগিয়ে মেহেরপুর সাব সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব নেন। যুদ্ধের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও তাদের অস্ত্রের জোগান দেওয়া তৌফিক এলাহী করেছেন। ট্রেজারি লুট হওয়ার পর উনি অবশিষ্ট টাকা বস্তায় ভরে ভারতে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেন। মেহেরপুরে যুদ্ধ সফল হওয়ার পেছনে তৌফিক এলাহীর অবদান ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সেই তৌফিক এলাহীর অনুপ্রেরণায় আমরা শিকারপুরে সম্মুখযুদ্ধ ছাড়াও দারিয়াপুর, বাগোয়ান মুজিবনগরসহ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।
শ্রুতি লেখক : মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর