মোবাইল একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। এর মাধ্যমে যোগাযোগ, তথ্যপ্রাপ্তি, কেনাকাটা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটছে। এ প্রযুক্তির সুফল সত্যিই প্রশংসনীয়। আবার এর অপব্যবহার সামাজিক বিপর্যয়ের কারণও বটে।
অনেক নারী-পুরুষ এর মাধ্যমে পরকালীন ক্ষতির দিকেও ধাবিত হচ্ছে। শরিয়তের দৃষ্টিতে মোবাইল ব্যবহারের প্রাথমিক আদব ও শিষ্টাচারগুলো সবার জানা প্রয়োজন।
সালাম দিয়ে কথা শুরু করা
এক মুসলিমের সঙ্গে অন্য মুসলিমের সাক্ষাৎ হলে প্রথমে সালাম দেওয়া সুন্নত। এটি ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মোবাইলে যোগাযোগের সময় এই সুন্নত আদায় করা জরুরি। অনেকেই হ্যালো দিয়ে কথা শুরু করেন। এটা ইসলামী শিষ্টাচারের পরিপন্থী। সালাম দিয়ে আলাপ শুরু করলে পারস্পরিক সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়।
আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সর্বপ্রথম সাক্ষাতের সময় আমি তাঁকে কথা বলতে শুনেছি, হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও। খাবার খাওয়াও। মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন (অর্থাৎ শেষ রাতে) নামাজ পড়ো। তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৩৪)
পরিচয় দিয়ে কথা বলা
মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এলে প্রথমেই প্রশ্ন করা হয় কে আপনি? এ ক্ষেত্রে ইসলামী শিষ্টাচার হলো উভয় পক্ষ নিজ পরিচয় নম্রভাবে জানিয়ে দেওয়া।
এতে বিভ্রান্তি দূর হয়, এবং যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ আলাপ ফলপ্রসূ হয়। পরিচয়হীন ব্যক্তির সঙ্গে গোপন বা সংবেদনশীল বিষয়ে আলোচনা করলে ভুল-বোঝাবুঝি ও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। জাবির (রা.) বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি বলেন, ‘কে?’ আমি বললাম, ‘আমি’। তখন তিনি বলেন, আমি, আমি! (এই কথায়) তিনি যেন তা অপছন্দ করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৮১৬)
কল দিয়ে বিরক্ত না করা
ঘুম মানুষের প্রাকৃতিক ও গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর রাতে বিশ্রাম গ্রহণ তার শরীর ও মনে প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে। কাজেই গভীর রাতে অপ্রয়োজনে কাউকে ফোন করা বিরক্তিকর ও শিষ্টাচারবহির্ভূত। হঠাৎ দুর্ঘটনা, মৃত্যু সংবাদ বা জরুরি চিকিৎসাসেবা বিষয়টি অবশ্য ভিন্ন। গভীর রাতে, নামাজের সময়, অফিসে ব্যস্ত সময়ে, ভ্রমণকালে একাধিকবার কল দেওয়া এবং মেসেজ করাও শিষ্টাচারবহির্ভূত। এগুলো প্রকৃত মুমিনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যায় না। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে সব মুসলিম নিরাপদ থাকে এবং প্রকৃত মুহাজির সে-ই, যে আল্লাহ তাআলার নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে। (মুসলিম, হাদিস : ৯)
নারীদের মোবাইল ব্যবহার
ইসলাম নারীদের মর্যাদা রক্ষায় অত্যন্ত যত্নবান। চলাফেরা, কথা বলা, আচরণ ইত্যাদিতে শালীনতা ও পর্দার নির্দেশ দিয়েছে। কণ্ঠস্বরের আকর্ষণ প্রকাশ করতেও নিষেধ করেছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং পরপুরুষের সঙ্গে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বোলো না, কারণ এতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে।’
(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২)
আজ মোবাইল ব্যবহারে নারীদের চটুল ভাষা, অপ্রয়োজনে পুরুষদের সঙ্গে হাস্যরস করা, অহেতুক আলাপচারিতা—এসবই পর্দাহীনতা ও গুনাহের দ্বার খুলে দিচ্ছে। এটি সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ। এ ব্যাপারে নারীদের সতর্কতা ও অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত জরুরি।
ভিডিও কলে শালীনতা
ইসলামে নারীর জন্য পর্দা পালন ফরজ। ভিডিও কলে কথা বলার সময়ও এটা পালন করতে হয়। মাহরাম আত্মীয় বা নারী-নারী পরস্পর ভিডিও কলে কথা বলতে পারে, তবে পরপুরুষের সঙ্গে পর্দাবিহীনভাবে ভিডিও কল করা নিঃসন্দেহে গুনাহের কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন দৃষ্টি সংযত করে, লজ্জাস্থান হেফাজত করে এবং সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)
আজকাল অনেক নারী মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ইত্যাদিতে ভিডিও কলে কথোপকন করে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সচেতনতা ও ইসলামী শালীনতা রক্ষা এখন সময়ের দাবি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন