হিজরি সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর এক অনন্য মনীষী, কালজয়ী প্রতিভা আল্লামা শামসুদ্দিন মুহাম্মাদ বিন আহমদ আজ-জাহাবি (রহ.)। জ্ঞানের ভুবনে তাঁর পদচারণা ছিল বিস্তৃত ও গৌরবময়। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন ইতিহাসবিদ, জীবনীকার, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও অভিজ্ঞ ফকিহ। তাঁর ছিল প্রখর মেধা ও প্রবাদতুল্য স্মৃতিশক্তি।
বিখ্যাত মনীষী আল্লামা ইবনে হাজার আল-আসকালানি (রহ.) তাঁর মেধার ভূয়সী প্রশংসা করেন। (তারিখুল ইসলাম : ১/১০)। এই মহান মনীষী ৬৭৩ হিজরিতে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম মুহাম্মাদ; তবে ‘জাহাবি’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। ‘জাহাবি’ অর্থ স্বর্ণকার। তাঁর পিতা স্বর্ণকার ছিলেন। (তারিখুল ইসলাম : ১/৭)/
আল্লামা ইমাম জাহাবি (রহ.)-এর শৈশব কেটেছে জ্ঞানান্বেষী পরিবেশে। তিনি অল্প বয়সেই কোরআন হিফজ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় দামেস্কে। সেখানকার বরেণ্য শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে তিনি জ্ঞান লাভ করেন। অতঃপর উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য শাম, মিসর, মক্কা, মদিনা, হিজাজ, সিরিয়া, ফিলিস্তিনসহ নানা অঞ্চলে সফর করেন। (তারিখুল ইসলাম : ১/৮)।
এভাবে জীবনের বড় একটি অংশ তিনি উৎসর্গ করেন জ্ঞান ও গবেষণার সাধনায়। তিনি হাদিস, ফিকহ, তাফসির, ইতিহাস, আকিদা, রিজালসহ বিভিন্ন শাস্ত্রে অতুলনীয় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। রিজাল শাস্ত্রে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি হাদিস বর্ণনাকারীদের চরিত্র, বিশ্বাস, স্মরণশক্তি, সততা প্রভৃতি বিশ্লেষণ করেন। তাঁর এই গবেষণা পরবর্তী যুগে হাদিসের মান নির্ধারণে মাপকাঠিতে পরিণত হয়। (তাবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা : ৫/৬২)।
ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) বলেন, হাদিস বর্ণনাকারীদের জীবনী বিশ্লেষণে মুহাদ্দিসরা চার ব্যক্তির ওপর নির্ভর করেন : ১. কামালুদ্দিন মিজজি (রহ.), ২. শামসুদ্দিন জাহাবি (রহ.), ৩. জাইনুদ্দিন ইরাকি (রহ.), ৪. ইবনে হাজার আল-আসকালানি (রহ.)। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১/১৮)। আল্লামা শামসুদ্দিন সাখাবি (রহ.) বলেন, রাবিদের যাচাই-বাছাইয়ে তিনি ছিলেন এক অতুলনীয় পর্যবেক্ষক। (তারিখুল ইসলাম : ১/১৫)।
ইমাম জাহাবি (রহ.) শুধু একজন গবেষকই ছিলেন না; বরং ছিলেন চিন্তক ও প্রাজ্ঞ লেখক। তাঁর রচনাগুলো ইসলামী জ্ঞানের ভাণ্ডারে এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো- সিয়ারু আলামিন নুবালা, তাবাকাতুল হুফফাজ, মিজানুল ইতিদাল, আল-মুগনি ফিজ-জুআফা, তারিখুল ইসলাম, তারিখুল কাবির ইত্যাদি। (শাজারাতুজ-জাহাব : ৮/২৬৭)।
ইমাম জাহাবি (রহ.)-এর সংকলিত ‘আল-মুজাম’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তাঁর শিক্ষকদের সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার ৩০০। যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম। (তারিখুল ইসলাম : ১/১০)।
ইমাজ জাহাবি (রহ.) জ্ঞানের সেবায় জীবন অতিবাহিত করেন। তাঁর ছাত্রদের ভেতর আল্লামা তাজউদ্দিন সুবকি ও হাফেজ ইবনে কাছির (রহ.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। (তারিখুল ইসলাম : ১/১৬)।
এই মহান আলেম ৭৪৮ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। (তাবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা : ১/৬৩)।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ