বিবাহের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ মোহর। বরের পক্ষ থেকে কনেকে বিবাহের সময় যে অর্থ বা সম্পদ প্রদান করা হয় বা পরে প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাকে মোহর বলা হয়। মোহর ছাড়া ইসলামে বিবাহ সংঘটিত হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে মোহর প্রদান করা স্বামীর কর্তব্য এবং এটি স্ত্রীর অধিকার।
মোহর পরিশোধ না করা কবিরা গুনাহ। বিবাহের প্রথম দিনেই পূর্ণ মোহর পরিশোধ করা উত্তম। পূর্ণ পরিশোধ করতে অক্ষম হলে কিছু হলেও পরিশোধ করতে হবে। স্ত্রী যদি কিছু মোহর পরিশোধ ছাড়া স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে অসম্মত হয়—এটি তার অধিকার হিসেবে পূরণ করা জরুরি।
পূর্ণ বা আংশিক মোহর পরিশোধ ছাড়াই যদি স্ত্রী স্বেচ্ছায় স্বামীর সংসার করে—এতেও কোনো অসুবিধা নেই। এ ক্ষেত্রে অপরিশোধিত পূর্ণ বা আংশিক মোহর স্বামীর ওপর স্ত্রীর ঋণ হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এটি এমন ঋণ, যা পরিশোধ বা সন্তুষ্টচিত্তে ক্ষমা করা ছাড়া মাফ হয় না। এ জন্য কেউ তার স্ত্রীর ওপর চাপ প্রয়োগ করে বা নারীত্বের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে মোহরের টাকা মৌখিক মাফ নিলেও স্বতঃস্ফূর্ত মাফ না করার কারণে অপরিশোধের গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবে না।
ফতোয়ার কিতাবে আছে—‘বিবাহের কারণে স্বামীর ওপর পূর্ণ মোহর পরিশোধ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে এমনভাবে যে তা আদায় করা বা স্ত্রী কর্তৃক মাফ করা ছাড়া রহিত হয় না।’
(ফাতওয়ায়ে শামি : ৫/৩০২)
প্রশ্ন হলো, অপরিশোধিত মোহর, যা স্বামীর ওপর ঋণ হিসেবে সাব্যস্ত, স্বামী যদি তা বিবাহের ১০ থেকে ২০ বছর বা আরো পরে পরিশোধ করে কিংবা স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর পরিশোধ করে অথবা স্বামী মারা যাওয়ার পর তার সম্পদ থেকে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা হয়, তাহলে তা কিভাবে পরিশোধ করা হবে? অর্থাৎ এতে মুদ্রাস্ফীতির ধর্তব্য হবে কি না? উদাহরণস্বরূপ—বিবাহ সংঘটিত হলো ২০০০ সালে এবং মোহর ধার্য ছিল দুই লাখ টাকা। আর তা পরিশোধ করা হচ্ছে ২০২৫ সালে। ২০০০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি হলো ১০ শতাংশ। তাহলে কি মুদ্রাস্ফীতির আলোকে দুই লাখের সঙ্গে ১০ শতাংশ যোগ করে দুই লাখ বিশ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে, নাকি বিবাহের সময় যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা-ই আদায় করতে হবে?
মোহর পরিশোধে মুদ্রাস্ফীতি ধর্তব্য নয়
এ ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালার আলোকে দুটি বিষয় স্মরণীয়—
এক. অপরিশোধিত মোহর স্বামীর ওপর ঋণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে যায় এবং এটি পরিশোধ করা স্বামীর ওপর এমন কর্তব্য, যেমন স্বামী যদি স্ত্রীর কাছ থেকে নগদ টাকা ঋণ নেয় আর পরে তা পরিশোধ করে।
দুই. শরিয়ত মোতাবেক কোনো ধরনের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রাসংকোচ ধর্তব্য নয়। সর্বাবস্থায় ঋণ পরিশোধ করতে হবে পরিমাণ হিসেবে—মূল্য হিসাবে নয়। এ পর্যায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে মোহর পরিশোধের ক্ষেত্রেও মুদ্রাস্ফীতি গ্রহণযোগ্য নয়, যেমন মুদ্রাসংকোচ গ্রহণযোগ্য নয়।
সুতরাং দুই লাখ টাকা মোহর ধার্য হওয়ার ৫০ বছর পর পরিশোধ করা হলেও দুই লাখ টাকাই পরিশোধ করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে মুদ্রার মূল্য ১০ শতাংশ কমে গেলেও দুই লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে না এবং কোনো স্ত্রী বা তার পক্ষ থেকে কেউ এমন দাবি করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
এ বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের একটি ফতোয়া হলো—‘মোহরানা তলব করলে প্রচলিত টাকায় পরিশোধ করবে।’ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে—বিবাহের সময় যে ধরনের টাকা প্রচলন আছে তার দ্বারা সেই পরিমাণ আদায় করতে হবে। সুতরাং যদি বিবাহের সময় ১০ হাজার টাকা মোহর নির্ধারণ হয়ে থাকে তাহলে স্বামীর ওপর ১০ হাজার টাকা আদায় করা আবশ্যক। চাই ১০-২০ বছর পরেই পরিশোধ করা হোক। পরিশোধের সময় স্বর্ণের মূল্যের তারতম্যের সঙ্গে মেলাতে হবে না। কারণ ফিকহের মূলনীতি অনুযায়ী ঋণ তার সাদৃশ্য দ্বারাই আদায় করতে হয়। (দারুল দেওবন্দের ওয়েবসাইট, ফতোয়া নং ১৬৩৩১৬)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন