ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজান। এ মাসে রসুল (সা.) নিজে ইবাদতের সাগরে ডুব দিতেন এবং পরিবার ও সাহাবিদের বেশি বেশি ইবাদত করতে উৎসাহ দিতেন। মাহে রমজানে রসুল (সা.)-এর ইবাদত সম্পর্কে অনেক বড় বড় বই লেখা হয়েছে। হাদিসের কিতাবেও সিয়াম অধ্যায়ে রসুল (সা.) এর রমজানের ইবাদত সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। তবে মোটাদাগে বলতে গেলে মাহে রমজানে রসুল (সা.) ৬ ধরনের আমল করতেন। আসুন সংক্ষেপে সে আমলগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
মাহে রমজানে রসুল (সা.)-এর ৬ আমল মাহে রমজানের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আমল হলো, রোজা রাখা। রসুল (সা.) সাহরি খেয়ে রোজা রাখতেন। দেরি করে সাহরি খাওয়াকে তিনি উম্মতের জন্য কল্যাণকর এবং দ্রুত ইফতার করাকে সৌভাগ্যের চিহ্ন বলেছেন। রসুল (সা.)-এর সাহরি ও ইফতারে কোনো জাঁকজমক ছিল না। খুব সাদামাটা খাবারের আয়োজনের মাধ্যমে তিনি উম্মতকে শিখিয়েছেন, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সংযমী হওয়া রোজার উদ্দেশ্য পূরণ তথা মুত্তাকি হওয়ার জন্য আবশ্যক।
রোজার পরই রসুল (সা.) যে আমলটির ব্যাপারে সবচেয়ে যত্নশীল ছিলেন তা হলো, রাতে দীর্ঘ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে থাকা। রসুল (সা.)-এর ওপর তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ ছিল। কিন্তু রমজান মাসে তিনি রাতের নামাজের ব্যাপারে আরও বেশি যত্নশীল ছিলেন। বিশুদ্ধ হাদিস থেকে জানা যায়, রসুল (সা.) টানা তিন দিন ২০ রাকাত করে তারাবিহর নামাজ আদায় করেছেন। পরবর্তী সময়ে সাহাবিদের অতিরিক্ত আগ্রহ এবং উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি এ নামাজ জামাতে আদায় করা থেকে বিরত থাকেন। উম্মতকে উৎসাহ দিয়ে রসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজা এবং সালাতুত তারাবিহর বিনিময়ে বান্দার পূর্ববর্তী জীবনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। মাহে রমজানেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয় এবং রসুল (সা.) এ মাসেই নবুয়তের নূর লাভ করেন। ফলে রমজান মাসে রসুল (সা.) বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। প্রতি বছর যতটুকু কোরআন নাজিল হতো রসুল (সা.) জিবরাইলকে তা শোনাতেন এবং জিবরাইলও আবার রসুল (সা.)-কে ততটুকু তেলাওয়াত করে শোনাতেন।
বছরের প্রতি রাতই রসুল (সা.) যত্নের সঙ্গে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। তবে রমজান এলে সে যতেœ যেন রত্ন খোঁজার মতো মনোযোগী হতেন। দীর্ঘ সময় তাহাজ্জুদ আদায়ের কারণে রসুল (সা.)-এর পবিত্র পা মোবারক ফুলে যেত। বছরের অন্যান্য সময় রসুল (সা.) স্ত্রীদের তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যাপারে জোর না দিলেও রমজানে বেশ আদরের সঙ্গে ডাকাডাকি করতেন। কখনো কখনো উম্মাহাতুল মুমিনিনদের ঘুম ভাঙানোর জন্য মুখে পানিও ছিটিয়ে দিতেন রসুল (সা.)।
মাহে রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা রসুল (সা.)-এর নিয়মিত সুন্নত ছিল। রসুল (সা.)-এর ওফাতের পর তাঁর পবিত্র স্ত্রীরা এ সুন্নত জারি রেখেছিলেন। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর রেওয়াত থেকে জানা যায়, রসুল (সা.) প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন। কিন্তু মৃত্যুর আগের বছর তিনি এতেকাফ করতে পারেননি। তবে মৃত্যুর বছর তিনি আগের বছরের ১০ দিনসহ মোট ২০ দিন এতেকাফ করেছিলেন। এতেকাফের মূল উদ্দেশ্য হলো লাইলাতুল কদর তালাশ করা। যেহেতু এ সৌভাগ্যময় রজনী নির্দিষ্ট নয়, তাই রমজানের শেষ দশকের এতেকাফের মাধ্যমে এ রাত ভাগ্যে জুটবে বলে হাদিস শরিফে দৃঢ়তার সঙ্গে বলা হয়েছে।
মাহে রমজানে রসুল (সা.) অত্যধিক পরিমাণে দানখয়রাত করতেন। বুখারি হাদিস থেকে জানা যায়, রসুল (সা.) প্রবাহিত বাতাসের মতো এ মাসে দান করতেন। অর্থাৎ বাতাস যেমন সব সময় প্রবাহিত হয়, কখনো বন্ধ থাকে না, তেমনি এ মাসেও রসুল (সা.) দানের হাত সব সময় সচল রাখতেন, কখনো গুটিয়ে নিতেন না।
লেখক : প্রিন্সিপাল, সেইফ এডুকেশন ইনস্টিটিউট পীর সাহেব, আউলিয়ানগর
বিডি প্রতিদিন/এমআই