নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ঈমান ও ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন, তিনি তাঁকে স্মরণ করতে বলেছেন এবং তাদেরকে রহমতে আবৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে বলেছেন এবং সাড়াদানের অঙ্গীকার করেছেন। তবে যে ইবাদত, জিকির ও দোয়ায় আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা, নিবেদন ও বিনয় যত বেশি থাকে আল্লাহ তাতে তত বেশি খুশি হন। এমন হয়ে থাকে মানুষ যখন একান্তে আল্লাহর ইবাদত ও প্রার্থনা করে।
নিভৃতে প্রার্থনার নির্দেশ : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বিনম্র হয়ে আল্লাহর ইবাদত ও প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো। তিনি অবিচারকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৫৫)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতটি যদিও দোয়া বিষয়ক। কিন্তু আল্লাহর ইবাদতগুলোতে দোয়াও শামিল থাকে। সুতরাং ইবাদতের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে। (মাজমুউল ফাতাওয়া : ১০/১৪-১৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ : রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া ও প্রার্থনার সময় বিনম্র হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু মুসা আশআরি ( রা.) বলেন, ‘এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন কোনো উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতাম।
আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নবী (সা.) আমাদের বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৯২)
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য : নীরবে-নিভৃতে ইবাদত ও প্রার্থনা করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য।
পবিত্র কোরআনে জাকারিয়া (আ.)-এর ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা জাকারিয়ার প্রতি, যখন সে তাঁর প্রতিপালককে আহবান করেছিল নিভৃতে।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ২-৩)
একান্তে প্রার্থনা করার উপকার : বুজুর্গ আলেমরা একান্তে আল্লাহর ইবাদত ও প্রার্থনা করার নিম্নোক্ত উপকারগুলো বর্ণনা করেন।
১. আল্লাহর মর্যাদার অনুকূল : বিনয়ের সঙ্গে নীরবে প্রার্থনা করা আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদার অধিক অনুকূল। কেননা পৃথিবীর রাজা-বাদশাহদের দরবারে মানুষ সর্বোচ্চ নীরবতা অবলম্বন করে।
২. দোয়া কবুলে সহায়ক : বিনয়ের সঙ্গে একান্তে দোয়া করার দ্বারা বান্দার অসহায়ত্ব ও অক্ষমতা বেশি প্রকাশ পায়। আর তা দোয়া কবুলে সহায়ক।
৩. নিষ্ঠা বেশি থাকে : একান্তে দোয়া করার অর্থ হলো, ব্যক্তি তা মানুষের সামনে প্রকাশ করতে চায় না। সুতরাং এতে অধিক নিষ্ঠা বা ইখলাস প্রকাশ পায়।
৪. মনোযোগ বেশি থাকে : বান্দা যখন নীরবে-নিভৃতে ইবাদত ও দোয়া করে, তখন তার পক্ষে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।
৫. প্রতারণা থেকে নিরাপদ : মানুষ যখন গোপনে ইবাদত ও প্রার্থনা করে, তখন তা শয়তানের প্রতারণা ও আত্মপ্রবঞ্চনা থেকে অধিক নিরাপদ থাকে। কেননা তখন তার ভেতর অন্যকে দেখানো ও আত্মমুগ্ধ হওয়ার মতো বিষয়গুলো থাকে না।
আল্লাহ সবাইকে নীরবে-নিভৃতে আল্লাহর ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন