৭২ ঘণ্টায় ছয়টি দেশের ভিতরে সামরিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। আলজাজিরার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, কাতার ও ইয়েমেনের ভিতরে এসব হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০০ জন।
মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় এক আলোচনার সময় হামাসের একটি অফিস লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই সময় গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছিল। এই হামলায় নিহত হন অন্তত ছয়জন, যাদের মধ্যে ছিলেন হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল-হাইয়ার ছেলে হুমাম আল-হাইয়া, তার তিন দেহরক্ষী এবং এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব এ ঘটনায় অক্ষত রয়েছেন বলে জানা গেছে। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, দোহায় হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে মাত্র ৭২ ঘণ্টায় ষষ্ঠ দেশে অভিযান চালাল ইসরায়েল। আর ২০২৫ সালের শুরু থেকে সপ্তম দেশ হিসেবে আক্রমণের শিকার হলো কাতার। গত সোমবার ছিল গাজা আগ্রাসনের ৭০২তম দিন। ওই দিন গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬৭ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে ১৪ জন ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহে আসা বেসামরিক কর্মকর্তা। পরদিন মঙ্গলবার আরও ৮৩ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হন। সোমবার দুপুরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান লেবাননের বেকা ও হারমেল জেলায় হামলা চালায়। এতে পাঁচজন নিহত হন। ইসরায়েল দাবি করে, হিজবুল্লাহর অস্ত্র গুদাম ও সামরিক স্থাপনায় এই হামলা চালানো হয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি হলেও ইসরায়েল নিয়মিত লেবাননের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, সোমবার রাতভর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হোমস ও লাতাকিয়ায় একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে দেশটির সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ সরকার পতনের পর থেকেই সিরিয়ায় হামলার পরিমাণ বেড়েছে। সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা ইতোমধ্যেই ইসরায়েল দখল করে নিয়েছে বলে সিরিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। সোমবার রাতে তিউনিসিয়ার সিদি বো সাইদ বন্দরে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রধান জাহাজ ‘ফ্যামিলি বোটে’ একটি সন্দেহভাজন ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালায়। এতে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও গাজামুখী নৌবহরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার ইসরায়েলি বাহিনী ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও আল-জাওফ প্রদেশে বিমান হামলা চালায়। ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এতে ৩৫ জন নিহত এবং ১৩১ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে একাধিক সাংবাদিকও রয়েছেন। -আলজাজিরা ও খালিজ টাইমস
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গতকাল তারা ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। হামলার সময় ইসরায়েলের বহু এলাকায় সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে। যদিও হুতি এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
তবে ফিলিস্তিনিদের সমর্থ ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে হুতি বিদ্রোহীরা। তারা জানিয়েছে, গাজা অবরোধ পুরোপুরি তুলে না নেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল লক্ষ্য করে তাদের হামলা অব্যাহত থাকবে। হুতি বিদ্রোহীদের দমাতে ইমেয়েনের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েল বেশ কয়েক মাস ধরেই হামলা চালিয়ে আসছে। বুধবারও হুতির স্থাপনা লক্ষ্য করে একাধিক হামলা চালায় ইসরায়েল। তবে এত হামলার পরও দমছে না হুতি। তারা নিপীড়িত গাজাবাসীর পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। -আলজাজিরা ও খালিজ টাইমস