‘স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও মুক্ত গণমাধ্যম সুষ্ঠু ভোটের রক্ষাকবচ। এগুলো নিশ্চিত হলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আগামীতে আর কোনো চ্যালেঞ্জ থাকবে না।’ গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ : সফল নির্বাচন আয়োজনে সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে নাগরিক কোয়ালিশন নামে একটি সংগঠন। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ অংশীজনরা অংশ নেন। নাগরিক কোয়ালিশনের সহসভাপতি ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সুজন সভাপতি এম এ মতিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফজলে বারী মাসউদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।
শফিকুল আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকারের ইচ্ছায় নয়, সমাজের বিভিন্ন অংশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপরও নির্ভর করে। ইলেকশন করে সোসাইটি, পলিটিক্যাল পার্টিগুলো। তারা যদি চায়, তাহলে একটি ভালো নির্বাচন অবশ্যই সম্ভব। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটার ব্যত্যয় হলে জাতির জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন ভালো হবে, তার একটা প্রতিফলন দেখা গেছে ডাকসুতে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষমতা রাখলেও অতীতের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধানে কমিশনের কর্মকাণ্ড সীমিত সময়সীমার মধ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচনি আইন ও আচরণবিধি সংশোধনের প্রস্তাব এরই মধ্যে মন্ত্রিসভায় জমা দেওয়া হয়েছে, যা পাস হলে নির্বাচন আয়োজনকে আরও শক্তিশালী করবে। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পারস্পরিক ঐকমত্যের অভাব। গণতন্ত্র উত্তরণে এখনো সর্বমহলে ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। তবে জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং আচরণবিধি দ্রুত সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচন কখন হবে বা কীভাবে হবে, তা কোনো দলের সংকীর্ণ স্বার্থে নয়, জাতীয় স্বার্থে নির্ধারিত হওয়া উচিত। সংস্কার প্রক্রিয়া নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ হবে। অন্তর্বর্তী সরকার, অধ্যাদেশ বা গণভোট সংবিধান সংস্কারের বিকল্প নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর অনাস্থা দূর করতে আইনগত বাধ্যবাধকতা ও ঐকমত্যের অঙ্গীকার জরুরি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো বিভিন্ন এজেন্সি এখনো রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা নির্বাচন বিকৃত করতে পারে, তাই স্বাধীন পুলিশ কমিশন দরকার। রাজনীতিতে অসম প্রতিযোগিতা রয়েই গেছে। সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর থেকে মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সেটা ফিরিয়ে আনতে সুষ্ঠু ভোট ছাড়া উপায় নেই। শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করা জরুরি। জুলাই সনদের কার্যকারিতা ও রাজনৈতিক আস্থার সংকট বড় চ্যালেঞ্জ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখন দুর্বল-ভয়, হুমকি ও সহিংসতা চলছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ না হলে সুষ্ঠু ভোট অসম্ভব। রাশেদ খান বলেন, ‘র্যাব, পুলিশ কেউ কি প্রধান উপদেষ্টার কথা শুনে? আমি সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। প্রশাসন থেকে সরকারকে কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না। এ সরকার ব্যর্থ হোক আমরা চাই না।’