আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল চলছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনও পুলিশ-প্রশাসন ঢেলে জানানোর কাজে হাত দেবে। সরকার পতনের পর পরিবর্তনের ধারায় পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। বছরের শুরুতে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৬৫ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়। গতকালও পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার ১৪ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে আগের ডিসিদের প্রত্যাহার করে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়। তখন এই নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ের ভিতরে হাতাহাতি, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। তখন ৯ জন ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়েছিল। রদবদল করা হয়েছিল চার জেলার ডিসিকে। আবার আগস্টেও ছয় জেলায় ডিসি পরিবর্তন করা হয়। নির্বাচনের আগে আরও রদবদল হতে পারে। ইতোমধ্যে তিন নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন এমন ৫৫ জনকে ওএসডি করা হয়েছে। ৮০ জনের বেশি পুলিশ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। মাঠ প্রশাসনের ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। ইসি বলছে, পুলিশ প্রশাসনের রদবদলের দিকেও ইসি নজর রাখছে। তফসিল ঘোষণার পর ইসি পুলিশ ও মাঠপ্রশাসনে ব্যাপক রদবদলে পরিকল্পনা নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ইসি সচিবালয়সহ মাঠ কর্মকর্তাদের রদবদল করা হয়েছে। গতকালও ব্যাপক রদবদল হয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে মাঠপ্রশাসন ঢেলে সাজাতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হবে। নির্বাচন কমিশন চলতি মাসের শেষ দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। প্রশাসনে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি দেবে ইসি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে প্রতিনিধি নির্ধারণ করে ইসিকে জানাতে হবে। যাতে প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারেন সংশ্লিষ্টরা। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী এ মাসের শেষের দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম সভা হবে। নির্বাচনি কার্যক্রমে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য প্রশাসনের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নির্ধারণ করে দিতে বলা হবে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমরা নিজেদের কর্মকর্তাদের চেঞ্জ করছি। প্রশাসন, পুলিশে চেঞ্জ হচ্ছে, আরও হবে।
মাঠ প্রশাসন সমন্বয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ইসি সচিবসহ সাত সদস্যের এ কমিটি ইসির সঙ্গে মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, সমন্বয় ও পরামর্শ দেবেন। নির্বাচনকালীন সময়ে উ™ূ¢ত যে কোনো সংকট নিরসনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান এবং আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে সমন্বয় ও পরামর্শ দেবে।
ইসির ৬১ জন কর্মকর্তাকে বদলি : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একযোগে ইসি সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের ৬১ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বদলি করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল ইসির সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমানের স্বাক্ষরিত তিনটি আলাদা বদলির অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ইসি সচিবালয়ে ও মাঠ পর্যায়ের ৪৯ জন কর্মকর্তাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বদলি/পদায়ন করা হলো। এদিকে ভিন্ন আরও দুটি আদেশে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপসচিব পদে ১২ জনকে বদলি করা হয়েছে। ৬১ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বদলি করা হলো। বদলি করা কর্মকর্তারা ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল হতে অবমুক্ত হবেন, অন্যথায় আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হবে বলে ধরা হবে।