যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা চার্লি কার্ককে বুধবার ইউটা ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে ‘আমেরিকান কামব্যাক ট্যুর’–এর অংশ হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাজির হাজারো দর্শকের চোখের সামনে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অপরাধী এখনো শনাক্ত হয়নি।
ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কার্ক মাটিতে পড়ে যান। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিনি ‘আমি ভুল প্রমাণ করুণ’ শীর্ষক প্রশ্নোত্তর সেশনে বসেছিলেন। সেই সময় একজন শিক্ষার্থী গণহত্যা এবং ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তপ্ত বিতর্কের মধ্যে ছাদ বা জানালা থেকে একাধিক গুলি চালানো হয়। কার্ক ঘটনাস্থলেই মারা যান, তবে তাঁর স্ত্রী ও সন্তান অক্ষত ছিলেন।
কার্কের পরিচয় ও রাজনৈতিক অবস্থান
চার্লি কার্ক ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে এই সংগঠনটি গড়ে তুলেন, যা তরুণ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প সমর্থন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তিনি নিয়মিত ফক্স নিউজে উপস্থিত হতেন এবং ‘দ্য চার্লি কার্ক শো’ নামে জনপ্রিয় পডকাস্ট ও রেডিও অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখের বেশি।
কার্কের রাজনৈতিক অবস্থান অনেক বিতর্কিত ছিল। তিনি দাবি করতেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাদা মানুষেরাই বেশি হামলার শিকার হন, আফ্রো–আমেরিকান আন্দোলনকে ‘ভ্রান্ত ধারণা’ বলে অভিহিত করতেন। ইসলাম ও গর্ভপাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হন। অস্ত্র রাখার সাংবিধানিক অধিকারকে সমর্থন করতেন এবং ইসরায়েলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন প্রকাশ করতেন।
হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত ও প্রতিক্রিয়া
প্রাথমিকভাবে দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হলেও পরে প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। ইউটার গভর্নর স্পেনসার কক্স হত্যাকাণ্ডকে সরাসরি রাজনৈতিক বলে উল্লেখ করেছেন।
রাজনৈতিক মহলে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটিকে ‘আমেরিকার অন্ধকারময় মুহূর্ত’ আখ্যা দিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জো বাইডেন, বিল ক্লিনটন ও জর্জ বুশসহ শীর্ষ নেতারা এটিকে গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও রাশিয়ার বিশেষ দূত কার্কের অবস্থান স্মরণ করেছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারও নিন্দা জানিয়েছেন।
৩১ বছর বয়সে চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়াবহ মাত্রা সামনে এনেছে। সমর্থকেরা তাঁকে দেশপ্রেমিক ও নির্ভীক নেতা হিসেবে স্মরণ করছেন, আর সমালোচকেরা বলছেন, তাঁর উসকানিমূলক রাজনীতি দ্বন্দ্বকে ঘনীভূত করেছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক