ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের দমনে ব্যাপক গ্রেপ্তার এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণদণ্ড কার্যকর করছে ইরান। বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। দেশটির কর্মকর্তা এবং মানবাধিকার কর্মীদের বয়ান অনুযায়ী, গত ১৩ জুন ইসরায়েলি বিমান হামলা শুরুর পর থেকেই ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।
ইসরায়েলের কিছু মহল ও ইরানের প্রবাসী বিরোধী গোষ্ঠী আশা করেছিল, এ হামলা সরকারের ভিত কাঁপিয়ে তুলবে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারবিরোধী কোনো বড় ধরনের আন্দোলন দেখা যায়নি, যদিও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
তবে নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে অবগত এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ভবিষ্যৎ অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের আশঙ্কায় এখন প্রধান অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে, বিশেষ করে কুর্দি অঞ্চলে। তিনি জানান, ইসরায়েলি গুপ্তচর, জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী ও নির্বাসিত বিরোধী সংগঠন পিপলস মুজাহিদিনের সম্ভাব্য তৎপরতা ঠেকাতে বিপুল নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এক মানবাধিকার কর্মী বলেন, আমরা এখন বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছি। কারণ যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতির অজুহাতে সরকার আমাদের ওপর চড়াও হতে পারে। তিনি আরও জানান, তার পরিচিত বহু মানুষকে তলব করে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএনএ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০৫ জনকে রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়। মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে উর্মিয়া শহরে তিনজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাদের তিনজনকেই কুর্দি বলে দাবি করছে ইরান-কুর্দি অধিকার সংগঠন হেংগাও। ইরানের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি।
এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থাপিত ব্যাখার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। -রয়টার্স, বিবিসি
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি এ ব্যাখ্যাকে ‘আইনিভাবে ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন।
চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলাকে ‘অবৈধ এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছে ইরান। একই সঙ্গে জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদের আওতায় আত্মরক্ষার অধিকার দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের হত্যা’ বলে অভিহিত করা হয়। চিঠিতে ইরাভানি আরও উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাধারণ সম্মেলনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ‘শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যেকোনো ধরনের হামলা কিংবা হামলার হুমকি আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং সংস্থাটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও যাচাই প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে’। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাসও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যে কেউ বলপ্রয়োগ করলে তাকে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে তা ব্যাখ্যা করতে হবে’। হামলাটি আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা বৈধ, এ প্রশ্নের জবাবে কাজা কাল্লাস বলেন, ‘শতভাগ বৈধ বলা যায় না’।