মিয়ানমারে আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। তবে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এই নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির জাতিগত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। সোমবার এই ঘোষণা দেয় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আরাকান আর্মি (এএ) মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জেনারেলদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে। বর্তমানে এই গোষ্ঠীটি দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের প্রায় পুরো অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
আরাকান আর্মি ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় শাসনের বিরোধিতা করা বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে জান্তা। বর্তমানে এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে দেশটির নতুন গণতন্ত্রপন্থী বিভিন্ন গেরিলা ইউনিটও সম্মুখ সারির লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে।
দেশটিতে অভ্যুত্থানের সময় জারি করা জাতীয় জরুরি অবস্থা গত জুলাইয়ের শেষের দিকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে জান্তা সরকার। ওই সময় দেশটিতে আগামী ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত গণতন্ত্রকামী আইনপ্রণেতারাসহ দেশটির জান্তাবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ মিয়ানমার জান্তার এই নির্বাচনকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। জান্তার শাসন টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে এই নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত পর্যবেক্ষণ করে আসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৪টি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র খাইং থু খা বলেছেন, ‘‘জনসমর্থনবিহীন নির্বাচন জনগণের কোনও উপকারে আসবে না, বরং তাদের আরও বিভ্রান্ত করবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘সামরিক জান্তা পরিষদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু আমাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তা হতে দেওয়া হবে না। আর এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, রাখাইনবাসী নির্বাচনে আগ্রহী নন।”
জান্তার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মিয়ানমারের মোট ৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার অন্তত ২৫ লাখই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইনে বসবাস করেন। প্রাথমিকভাবে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর থাকলেও ২০২৩ সালের শেষের দিকে সেটি ভেস্তে যায়।
পরে দেশটির অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোও আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে অংশ নেয়। দেশটির সশস্ত্র এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে একের পর এক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারায় সামরিক বাহিনী।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলার জবাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। পাশাপাশি উপকূলীয় এই রাজ্যকে দেশের বাকি অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে সেখানে অঘোষিত অবরোধ আরোপ করে জান্তা।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে রাখাইনে প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় বসবাস করছেন। মিয়ানমারের জান্তা বলেছে, তারা স্থিতিশীলতা, শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে ওই রাজ্যের ১৪টি শহরে জরুরি অবস্থা জারি রেখেছে। সূত্র: সিএনএ, দ্য স্ট্রেইটস টাইমস, এএফপি
বিডি প্রতিদিন/একেএ