রণতরীতে নতুন প্রযুক্তি যোগ করে এবার তাক লাগালো চীন। সেই সাথে নিজেদের প্রযুক্তিক ঐশ্বর্যে ভাগ বসানোয় আমেরিকার চোখও উঠেছে কপালে। মার্কিন বিশ্লেষকরাও শুরু করছেন নানা বিচার বিশ্লেষণ।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের নতুন বিমানবাহী রণতরী এবার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে সফলভাবে তিনটি যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করেছে। এই একই প্রযুক্তি এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই ছিলো। চিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিসিটিভি-র প্রকাশিত ফুটেজে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
চিনের নতুন রণতরী ফুজিয়ান থেকে পঞ্চম প্রজন্মের জে-৩৫ স্টিলথ ফাইটার, ৪.৫-প্রজন্মের জে-১৫টি ফাইটার এবং কেজে-৬০০ আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল এয়ারক্রাফট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এই উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এয়ারক্রাফট লঞ্চ সিস্টেম (ইএমএএলএস)। চিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই পরীক্ষাকে দেশের নৌবাহিনীর ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছে। বর্তমানে বিশ্বে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড রণতরীতেই এই একই ধরনের ইএমএএলএস প্রযুক্তি রয়েছে। আমেরিকার পুরোনো দশটি রণতরী অবশ্য এখনও স্টিম-চালিত ক্যাটাপল্ট ব্যবহার করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সফল পরীক্ষার পর খুব শীঘ্রই ফুজিয়ানকে চিনা নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।
কেন এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ?
ইএমএএলএস প্রযুক্তি প্রচলিত ‘স্কি-জাম্প’ র্যাম্পের তুলনায় যুদ্ধবিমানকে অনেক বেশি ওজনের অস্ত্র ও জ্বালানি নিয়ে উড়তে সাহায্য করে। এর ফলে বিমানগুলোর হামলার সক্ষমতা এবং পাল্লা অনেক বেড়ে যায়। এর আগে চিনের পুরোনো রণতরী শ্যানডং এবং লিয়াওনিং-এ এই সুবিধা ছিল না। ফুজিয়ানের এই নতুন ক্ষমতা চিনের নৌবাহিনীর সমুদ্র সক্ষমতা আরও অনেক বৃদ্ধি করবে।
পারমাণবিক শক্তি বনাম প্রচলিত জ্বালানি
যদিও ফুজিয়ান এমএএলএস প্রযুক্তি মার্কিন রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ডের সমতুল, তবে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব বিমানবাহী রণতরী পারমাণবিক শক্তি চালিত, যা তাদের দীর্ঘ সময় ধরে সমুদ্রে থাকার ক্ষমতা দেয়। অন্যদিকে, ফুজিয়ান চলে প্রচলিত জ্বালানিতে, ফলে এটিকে জ্বালানি ভরার জন্য বন্দরে ভিড়তে হয় অথবা সমুদ্রে থাকা অবস্থায় ট্যাঙ্কার থেকে জ্বালানি নিতে হয়।
সামরিক উত্তেজনা এবং যোগাযোগ
এই প্রযুক্তিগত সাফল্যের মধ্যেই তাইওয়ান প্রণালী এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান সামরিক তৎপরতা নিয়ে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলির মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বেইজিং সফর করছে। তাদের মূল লক্ষ্য হল দুই দেশের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। মার্কিন আইনপ্রণেতা অ্যাডাম স্মিথ বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি সামরিক শক্তি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ থাকা খুবই জরুরি, যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা ভুল হিসাবের কারণে বড় কোনো বিপদ না হয়।
সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল