ভারতের জনপ্রিয় গায়ক, সুরকার ও সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ের কাছাকাছি থাকা নাম জুবিন গার্গ। জীবনজুড়ে গানকে সঙ্গী করা এই গায়ক নিজের মতো করে বেঁচে থেকেছেন, নিজের মতো করেই জীবনকে দেখেছেন। কোনো নিয়মের মধ্যে নিজেকে আটকে না রেখে, ভালোবাসা ও সঙ্গীতকে সর্বস্ব করেছেন তিনি। তবে জীবনের শেষ ইচ্ছা নিয়েও তাঁর মন ছিল স্পষ্ট। এক সাক্ষাৎকারে সেই কথাই বলেছিলেন খোলাখুলি।
গুয়াহাটির 'মহাবহু ব্রহ্মপুত্র রিভার হেরিটেজ সেন্টার’-এ দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, “এই জায়গাটা খুব সুন্দর, খুব শান্তিপূর্ণ। বয়স হলে আমি এখানেই থাকতে চাই, এখানেই মরতে চাই। আমার শেষ ইচ্ছা মৃত্যুর পর যেন আমাকে ব্রহ্মপুত্র নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।”
এই কথার মধ্যেই যেন ধরা পড়ে তাঁর আসামপ্রেম, তাঁর গভীর আবেগ, এবং জীবনের প্রতি দর্শন। তিনি আরও বলেছিলেন, “আমি একজম আর্মি। তাই মৃত্যুকে ভয় পাই না। মৃত্যুর পরও চাই, আমার শরীর যেন অসমের নদীতেই মিশে যায়।”
জীবনের শুরু থেকেই সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ। মাত্র তিন বছর বয়সে মায়ের কাছ থেকে গান শেখা শুরু। ১৯৯২ সালে পেশাদার শিল্পী হিসেবে পথচলা শুরু করেন জুবিন। অহমিয়া সিনেমা ও অ্যালবামের বাইরে বাংলা এবং হিন্দি ভাষাতেও গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কাজ করা বাংলা ছবির গান ‘মন মানে না’, ‘পিয়া রে’ আজও বহু শ্রোতার হৃদয়ে জায়গা করে আছে। আবার বলিউডে প্রীতমের সুরে ‘গ্যাংস্টার’ ছবির ‘ইয়া আলি’ গানটি গোটা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং জুবিনকে এনে দেয় এক নতুন পরিচিতি।
প্রতিভাবান শিল্পী হলেও, ব্যক্তিগত জীবনের নানা অনিয়মে তিনি মাঝেমধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছেন। মাদকাসক্ত অবস্থায় স্টেজে গান গাওয়ার অভিযোগ, আচরণগত সমস্যাসহ বিভিন্ন বিতর্ক তাঁর ক্যারিয়ারে ছায়া ফেলেছিল। অনেকেই মনে করেন, তাঁর অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন হয়তো একসময় তাঁকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
তবে সেইসব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে জুবিন সবসময় বলেছেন গান, জীবন ও অসমের কথা। ব্রহ্মপুত্র নদ তাঁর কাছে ছিল ভালোবাসার প্রতীক। তাঁর জীবনযাত্রা যেমন ছিল আবেগে পরিপূর্ণ, তেমনি মৃত্যুর পরও চেয়েছেন শান্তির সেই নদীতেই মিলিয়ে যেতে।
বিডি প্রতিদিন/মুসা