আগামী ফেব্রুয়ারি টার্গেট করে দেশে এখন নির্বাচনি হাওয়া বিরাজ করছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে পুরোপুুরি ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপি। এরই মধ্যে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। দলটির উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছেন, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করা হতে পারে। এরপর ধাপে ধাপে সাক্ষাৎকার ও মূল্যায়নের মাধ্যমে দলের মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ করবে।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংস্কারসহ বাস্তবভিত্তিক সবকিছু সংযোজন করে সময়োপযোগী ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু করেছে বিএনপি। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ইশতেহারকে গণমুখী আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবকে প্রাধান্য দিয়ে তা করা হচ্ছে। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা এবং জাতীয়তাবাদী কয়েকজন বুদ্ধিজীবী, সাবেক আমলা, কূটনীতিক ও অর্থনীতিবিদ এই ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করছেন।
প্রার্থী বাছাই শুরু : নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়ায় গতি এনেছে বিএনপি। সেই লক্ষ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মিত্রদলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়েও কাজ করছে তারা। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, অক্টোবরের মধ্যেই আসনভিত্তিক প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পাশাপাশি মিত্রদলগুলোকেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নের ক্ষেত্রে আন্দোলন-সংগ্রামে দলের নেতাদের ভূমিকা, জনসম্পৃক্ততা ও সাংগঠনিক ত্যাগ গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির সহযোদ্ধা হিসেবে মাঠে থাকা মিত্রদলগুলোর ত্যাগী নেতাদেরও দলীয় মনোনয়নে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসনভিত্তিক গত ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর টানা দুই দিন ঢাকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, পাবনা, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাইবান্ধার একাধিক প্রার্থী পৃথকভাবে সাক্ষাৎকার দেন। একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে ডেকে তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন শীর্ষনেতারা। সাক্ষাৎকারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রার্থীদের জানান, চূড়ান্ত মনোনয়ন যাঁকেই দেওয়া হবে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পক্ষে কাজ করতে হবে। এই সাক্ষাৎকার ধারাবাহিকভাবে চলবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সাক্ষাৎকারে জয়পুরহাট-১, জয়পুরহাট-১ ও ২, রাজশাহী-৫, সিরাজগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এ ছাড়া ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত গুলশানে সালাহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন আসনের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পৃথক সাক্ষাৎকার ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। আর আগে বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী অঞ্চলের বেশ কিছু আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ ও সাংগঠনিক নেতারা কথা বলেছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অনেক এলাকায় আমাদের প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। সেখানে সবাইকে ডেকে কথা বলা হচ্ছে যে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাইকে তা মানতে হবে। আমরা শরিকদের জন্য কিছু আসন ছাড়ব। নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে এ ধরনের অনেক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থাকে, এখন সেগুলোই করা হচ্ছে।
ইশতেহার তৈরির কাজ : নির্বাচন সামনে রেখে গণমুখী আধুনিক ইশতেহার তৈরি করছে বিএনপি। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য ও ন্যায়পাল নিয়োগের কথাও থাকছে ইশতেহারে। এ ছাড়া সব নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড, নারীদের ফ্যামিলি কার্ড, কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড, শিক্ষিতদের জন্য বেকার ভাতার ব্যবস্থা ও এক বছরে ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের কথাও এতে থাকছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা ধারণ করে তরুণ সমাজসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের চাওয়াপাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে এবার বাস্তবতার আলোকে বিএনপি একটি যুগোপযোগী নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। দলীয় হাইকমান্ড ইশতেহারের ড্রাফট তৈরির কাজে জড়িতদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। ইশতেহারের ড্রাফট তৈরির কাজ শেষ হলে দলীয় হাইকমান্ড প্রয়োজনে এতে আরও কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে তা চূড়ান্ত করবেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় নির্বাচনি ইশতেহার প্রচার করবে বিএনপি। এরপর তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় মানুষের হাতে হাতে তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেই সঙ্গে ক্ষমতায় গেলে কীভাবে নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন করা হবে সে ব্যাপারেও জনমত তৈরি করবে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুগোপযোগী নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করবে বিএনপি। এই ইশতেহার প্রণয়নে দল ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই বিএনপির নির্বাচনি ইশতেহার সর্বমহলে প্রশংসিত হবে।