রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগবাণিজ্যে স্থবির হতে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। একই সঙ্গে এটি যেন পছন্দের ব্যক্তিদের ঠিকাদারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। এ অনিয়ম-দুর্নীতির প্রধান হোতা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এ সামাদ মৃধা। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কোম্পানিটি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসরদের পুনর্বাসন ও স্বজনপ্রীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ইডিসিএল ও সামাদ মৃধার দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানী তথ্য তুলে ধরেছেন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও সামাদ মৃধা সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে বসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, টেন্ডারবাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, ছাঁটাইবাণিজ্য, নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন এবং অর্থ লোপাটের অভিযোগ সরকারের স্বায়ত্তশাসিত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটিকে আরও বিতর্কিত করেছে। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারীর ভাই এবং শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. আমিনুল ইসলাম রুবেল এখনো ইডিসিএলের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে এ দপ্তরে টেন্ডারবাজি করে বিপুল টাকা কামিয়েছেন। বিশেষ করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেক শুভ্রকে ব্যবসায়িক পার্টনার বানিয়ে পুরো এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডকে পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছিলেন। বর্তমান এমডি মো. এ সামাদ মৃধা যোগদান করার পর থেকে সেই রুবেলচক্র একইভাবে প্রতিষ্ঠানটি জিম্মি করে ফেলছে। আওয়ামী লীগ নেতা মো. আমিনুল ইসলাম রুবেল এখন ইডিসিএলের এমডির ভাতিজা নাজমুল হুদা, প্রোডাকশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম এবং পারচেজ ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম সরকারকে দরপত্র কারসাজি করে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন। এমনকি এ তিনজনকে রুবেল তাঁর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মার্ক করপোরেশন, আর কে ট্রেডার্স ও সানবিন ইন্টারন্যাশনালের অঘোষিত পার্টনার বানিয়ে একচেটিয়াভাবে ব্যবসা দিচ্ছেন। এর বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা কমিশন নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন এমডি সামাদ মৃধা।
অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, ইডিসিএলের দায়িত্ব নিয়ে সামাদ মৃধা শুরু করেছেন ছাঁটাইবাণিজ্য। এ পর্যন্ত ছাঁটাই করা হয়েছে ৭২২ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভাতিজা নাজমুল হুদা এবং প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলামের মাধ্যমেই চলছে এসব অপকর্ম। অনুসন্ধানে জানা যায়, ইডিসিএলের ঢাকা প্ল্যান্টে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১২৫ কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পুনরায় ৩৭ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পুরো আর্থিক লেনদেনটিই হয় গোপনে। কোনো ধরনের নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে নিজের ভাতিজা নাজমুল হুদাকে সিনিয়র অফিসার ও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন এমডি। এরপর তিন দিনের মাথায় তাঁকে ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতিও দেন। অথচ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় এই নাজমুল হুদা ছিলেন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর ডান হাত। এ ছাড়া তিনি সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানের পিকনিক পার্টির নামেও অর্থ লোপাট করেছেন সামাদ মৃধা। প্রতিষ্ঠানটির খুলনা এসেনসিয়াল ল্যাটেক্স প্ল্যান্টের (কেইএলপি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক বনভোজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা পিকনিক পার্টির আয়োজন করা হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। এখানে বিভিন্ন খাতে খরচের নামে অর্থ লোপাট করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে মো. এ সামাদ মৃধা বলেন, ‘আমি দ্বৈত নাগরিক হতেই পারি। এতে কার কী সমস্যা? আমার ভাতিজাকে নিয়োগ দিতেই পারি, এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হলে আইনিভাবে মোকাবিলা (ফেস) করব।’