‘বাণিজ্য চাপের’ মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামানোর লাগাতার দাবি করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন, সেসময় ওই ঘরে মোদির পাশেই ছিলেন তিনি। কথোপকথনে যুদ্ধবিরতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কোনও কথা-ই ওঠেনি।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। হামলাকারীরা পাকিস্তান-সমর্থিত লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করে ভারত পাকিস্তানে হামালা চালায়। তবে পাকিস্তান ভারতের দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, ট্রাম্প গত ২৬ জুন হেগ-এ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, আমি একাধিক ফোনকলের মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করেছি। আমি বলেছিলাম, তোমরা যদি লড়াই করতেই চাও, তবে বাণিজ্য হবে না। তখন ওরা বলল, না না, আমরা বাণিজ্য চাই।
এদিকে, নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজউইককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করা হয়- ব্যবসা-বাণিজ্যের টোপ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো হয় বলে যে দাবি করছেন ট্রাম্প, তা কতটা সত্য?
উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, আমি বলতে পারি, গত ৯ মে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেন, আমি ওই ঘরেই ছিলাম। জেডি ভ্যান্স জানান, পাকিস্তান বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি ওই হুমকিতে টলেননি। বরং তিনি জানিয়ে দেন, ভারতের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া মিলবে।
তবে জয়শঙ্কর ভারতের অবস্থান স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরলেও, ট্রাম্প এখনও যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করে চলেছেন। কয়েকদিন আগেও তাকে বলতে শোনা যায়, ফোনে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসঙ্গ তুলে আমিই ইতি (যুদ্ধে) টেনেছি। আমি তাদের বলি, এভাবে যুদ্ধ করলে আমরা তোমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য আর করব না। আর তাতেই তারা যুদ্ধ থেকে সরে আসে। ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
এর প্রতিক্রিয়ায় জয়শঙ্কর বলেন, কূটনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে কোনও সংযোগ নেই। দুই ক্ষেত্র স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। তার বক্তব্য, ব্যবসায়ীরা তাদের কাজ করে চলেছেন; সংখ্যা, পণ্য নিয়ে আলোচনা করছেন। আমি মনে করি, ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত পেশাদার, অবিচল।
৯ মে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে হামলার তীব্রতা বাড়ানো হয় বলেও মেনে নেন জয়শঙ্কর। কিন্তু দ্রুতই ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের কড়া জবাব দেয় বলেও দাবি তার।
জয়শঙ্কর দাবি করেন, ১০ মে তার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র আলোচনা হয়। রুবিও জানান, পাকিস্তান আলোচনার জন্য প্রস্তুত। ওই দিন বিকালেই পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের নির্দেশে ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহ ভারতীয় ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘোষকে ফোন করে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানান। সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/একেএ