বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভোক্তাদের আচরণগত পরিবর্তন এসব কিছু মিলিয়ে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। তবে এই সংকটই কিছু ব্র্যান্ডের জন্য সম্ভাবনার নতুন জানালা খুলে দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশবন্ধু গ্রুপের ব্র্যান্ড প্রধান আবদুল্লাহ আল জাবেরের সঙ্গে কথা বলে কনজুমার পণ্য বা এফএমসিজি খাতের বর্তমান চিত্র ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন।
আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, এখন বাংলাদেশের এফএমসিজি ইন্ডাস্ট্রি এক কঠিন সময় পার করছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক চাপে অনেক ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা প্রতিদিনের ভোক্তা আচরণের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিযোগিতা দেশীয় ও বৈশ্বিক দুটোই তীব্র, যা এই অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, চাপের জায়গাগুলো স্পষ্ট বিক্রয় কমেছে, সরবরাহ ব্যবস্থায় জটিলতা এসেছে, আর ভোক্তার আচরণ বদলে যাচ্ছে। তবে এ সবই আমাদের সতর্ক করে তুলছে। আমরা ভাবছি কীভাবে আরও গভীরভাবে মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায়, কীভাবে তাদের বাস্তব চাহিদা বোঝা যায়।
আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, এখন ব্র্যান্ডগুলো আরও ভোক্তাকেন্দ্রিক হয়ে উঠতে বাধ্য হচ্ছে। মানসম্পন্ন পণ্যের পাশাপাশি এখন স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিবেশবান্ধবতা ও নৈতিক উৎপাদন প্রক্রিয়াও গুরুত্ব পাচ্ছে। এতে করে ব্র্যান্ড হিসেবে আরও পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আবদুল্লাহ আল জাবের আরও বলেন, আজকের ভোক্তারা অনেক বেশি সচেতন। তারা শুধু পণ্যের গুণমান নয়, তার উৎস, নিরাপত্তা এবং কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়েও জানতে চান। তারা এখন ব্র্যান্ডের মূল্যবোধ বিবেচনায় নিচ্ছেন, যা এফএমসিজি খাতকে প্রতিবছর ৮ থেকে ৯% হারে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল মিডিয়া এখন শুধু প্রচারের মাধ্যম নয়, এটি এক ধরনের লাইফলাইন। তরুণ প্রজন্মের ৯০% সিদ্ধান্তই অনলাইন কনটেন্ট দেখে আসে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু প্রচার নয়, বিশ্বাস ও মানবিক সংযোগ তৈরি করাও জরুরি। আবদুল্লাহ আল জাবের আরও বলেন, বাস্তবধর্মী, আকর্ষণীয় ও ইন্টার-অ্যাকটিভ কনটেন্ট যেমন ভিডিও, মিম, কুইজ ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। তবে বার্তা যেন সাংস্কৃতিকভাবে প্রাসঙ্গিক হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্বাস আসে সততা ও প্রাসঙ্গিকতা থেকে। আমরা স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতিতে কথা বলি, মাইক্রো-ইনফ্লুয়েন্সারদের যুক্ত করি এবং ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কার্যকর বার্তা তৈরি করি। এতে মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়।
আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ভোক্তাকে প্রাধান্য দিন, শুধু পণ্য নয়। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করুন, স্বচ্ছতা বজায় রাখুন, আর বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলুন। যারা দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে এবং নেতৃত্ব দেবে। বর্তমান বাস্তবতা বাংলাদেশের এফএমসিজি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। তবে এই পরিস্থিতিই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। আবদুল্লাহ আল জাবেরের কথায় যেমন উঠে এসেছে- এখন শুধু ভালো পণ্য নয়, দরকার আস্থা তৈরি, ডিজিটাল সংযোগ এবং মানবিক স্পর্শ। যারা এই তিনটি জায়গায় কাজ করবেন, তারাই আগামীর ব্র্যান্ড লিডার হবেন।