টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন ইনজেকশন ছাড়া সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই ধরণের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেক রোগী এখন নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণের প্রয়োজন ছাড়াই সুস্থ জীবনযাপন করছেন। তাদের ওপর চালানো হয়েছে ‘আইলেট সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন’ নামে একটি সহজ ও নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. তাহরা আবদাল্লাহ আল আলি জানান, টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যাদের শরীর ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম, তাদের অর্ধেক রোগী এই চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়েছেন। অনেকে পুরোপুরি ইনসুলিন ছেড়ে দিতে পেরেছেন। আবার কাউকে কাউকে কম মাত্রায় এবং কম ঘনঘন ইনসুলিন নিতে হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, ২৫ জন রোগীর শরীরে প্যানক্রিয়াস থেকে সংগৃহীত কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ রোগী কোনো ওষুধ ছাড়াই ভালো আছেন।
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে দাতা ব্যক্তির দেহ থেকে সংগ্রহ করা ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া হয় তা নিরাপদ কিনা। তারপর সেগুলো একটি ক্যাথেটার (সূক্ষ্ম নল) এর মাধ্যমে চামড়ার নিচ দিয়ে লিভারে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই কোষগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যার ফলে রোগীদের ইনসুলিন ইনজেকশনের প্রয়োজন পড়ে না।
এটি একটি বিকল্প পদ্ধতি, যাতে পুরো প্যানক্রিয়াস প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয় না। ফলে অস্ত্রোপচারের জটিলতা, যেমন রক্তপাত বা অঙ্গ প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকিও কমে যায়।
এখন পর্যন্ত এই চিকিৎসা কেবল টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রযোজ্য। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে মূল সমস্যা হলো ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যাওয়া, আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে।
এ বিষয়ে অস্টার হাসপাতালের হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. পাটাঞ্জালি পাণ্ডুরঙ্গা জানান, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA) এই চিকিৎসা অনুমোদন দেয়, বিশেষ করে যেসব টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন নিয়েও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হন, তাদের জন্য।
তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, রোগীকে সারা জীবন ইমিউনোথেরাপি নিতে হতে পারে এবং উপযুক্ত কোষদাতার সংকট রয়েছে।
অন্য আরেক চিকিৎসক ডা. অরবিন্দ গাড্ডামিডি বলেন, এই পদ্ধতিতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগে এবং এতে শুধুমাত্র স্থানীয় অ্যানেস্থেসিয়া (চেতনানাশক) ব্যবহার করা হয়। ফলে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীরাও এটি নিতে পারেন। তবে কোষদাতা সংকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, স্টেম সেল থেকে আইলেট কোষ তৈরির গবেষণা চলছে। এতে ভবিষ্যতে কোষ সংকট কাটিয়ে আরও বেশি রোগী এই চিকিৎসার আওতায় আসতে পারবেন।
এই চিকিৎসা এখনো প্রথম ধাপের সমাধান না হলেও, যারা ইনসুলিন নিতে নিতে ক্লান্ত বা জটিলতায় পড়েছেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে এক নতুন আশার আলো।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল