চট্টগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর ‘নির্বাচনি দায়িত্বশীল সম্মেলনে’ এক বক্তব্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী। নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যটি গতকাল পুরো টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। জামায়াতের এই নেতার বক্তব্যটি ভাইরাল হওয়ার পর বিএনপি এটিকে স্পষ্টতই ষড়যন্ত্রপ্রসূত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবপূর্ণ মন্তব্য করে শাহজাহান চৌধুরীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘নির্বাচনি দায়িত্বশীল সম্মেলনে’ প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তবে শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের সময় তিনি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না। অনুষ্ঠানে শাহজাহান চৌধুরী বক্তব্য রাখতে গিয়ে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা ও অস্ত্র ঢুকবে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়, যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। তারা আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে। যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, নুরুল আমিন (নগরের সেক্রেটারি) ভাইয়ের ফটিকছড়িতে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম, তা সকালবেলায় জেনে নেবেন আর আপনাকে প্রটোকল দেবেন।’
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম নগরের আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আহসানুল্লাহ, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য মুহাম্মদ জাফর সাদেক, মোস্তাফিজুর রহমান, আমিরুজ্জামান, নুরুল আমিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আমির আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, উত্তর জেলা আমির আলাউদ্দিন সিকদার প্রমুখ। শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যটি শনিবার রাতেই ব্যাপকহারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল সারাদিন তার এই বক্তব্য ঘিরে চট্টগ্রামজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজার পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াত আমিরের উপস্থিতিতে দেওয়া শাহজাহান চৌধুরীর এই মন্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, বরং স্পষ্টতই ষড়যন্ত্রপ্রসূত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবপূর্ণ। তার এমন বক্তব্য নির্বাচনি পরিবেশকে অস্থিতিশীল ও উত্তেজনামূলক করে তোলার একটি সুস্পষ্ট অপচেষ্টা, যা গণতান্ত্রিক রাজনীতির নীতি, আচার ও আদর্শের ওপর সরাসরি আঘাত হানে।’
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রশাসনের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি, নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত এবং জনগণের ভোটাধিকারকে খর্ব করার উদ্দেশে এমন বক্তব্য প্রদান রাজনৈতিক দায়িত্ববোধবর্জিত আচরণের জঘন্য উদাহরণ। এটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংসের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত একটি অপতৎপরতারই অংশ। শাহজাহান চৌধুরীর ভাষায় যে স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা প্রতিফলিত হয়েছে, তা অতীতের মানবতাবিরোধী অপশক্তির বর্বরতা ও দমননীতির করুণ স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।’ তারা আরও বলেন, ‘নির্বাচনকে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব রাজনৈতিক শক্তির দায়িত্বশীল অবস্থান অপরিহার্য। কিন্তু শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য নির্বাচনি শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে এক ধরনের উসকানিমূলক হামলা, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শাহজাহান চৌধুরীকে তার রাজনৈতিক শালীনতাবিরোধী, ঘৃণ্য, ষড়যন্ত্রপ্রসূত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবপূর্ণ বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।’ একই সঙ্গে বিএনপি নেতারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এই উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানের কারণে শাহজাহান চৌধুরীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।