বাংলাদেশে স্মার্ট টিভি, স্মার্ট ফ্রিজ, স্মার্ট ওয়াশিং মেশিনসহ আধুনিক গৃহস্থালি প্রযুক্তি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সময় সাশ্রয়, ঝামেলাহীন ব্যবহার ও উন্নত সুবিধার কারণে ভোক্তারা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। স্মার্ট প্রযুক্তির এই রূপান্তর, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন ইলেক্ট্রো মার্ট গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আফছার।
মো. নুরুল আফছার বলেন, প্রযুক্তির উন্নতিতে পৃথিবী আজ বহুদূর এগিয়েছে। ঘরের রেফ্রিজারেটর থেকে শুরু করে ওয়াশিং মেশিন, টিভি সবকিছুই আজ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ, আরও আরামদায়ক করে তুলছে।

তিনি জানান, ব্যস্ত জীবনে অনেকেই সপ্তাহে একবারের বাজার করে ফ্রিজে রেখে দেন। স্মার্ট ফ্রিজের উন্নত কুলিং সিস্টেম খাবারকে দীর্ঘ সময় সতেজ রাখে। নিম্ন তাপমাত্রা ব্যাকটেরিয়ার গতি ধীর করে, ফলে খাবার নষ্ট হয় কম আর এখানেই স্মার্ট ফ্রিজের বড় অবদান। স্মার্ট ওয়াশিং মেশিন কর্মব্যস্ত মানুষের সময় বাঁচায়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধোয়া ও শুকানোর সুবিধা গ্রাহককে অতিরিক্ত ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখে। স্মার্ট টিভিতে যুক্ত হয়েছে ভয়েস কন্ট্রোল, উন্নত ইন্টারফেসসহ আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক ফিচার-যা টিভি দেখাকে নতুন অভিজ্ঞতায় পরিণত করছে।
তিনি বলেন, স্মার্ট প্রযুক্তির পর গ্রাহকদের আচরণে বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন তারা দ্রুত, সহজ এবং উন্নত সেবা চান। অপেক্ষা করতে চান না। গ্রাহকরা আজ আধুনিক স্মার্ট ফিচার, এনার্জি সাশ্রয়, সময় বাঁচানো সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ফলে ইলেকট্রনিকস বাজারেও স্মার্ট প্রযুক্তির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। মো. নুরুল আফছারের মতে, স্মার্ট হোম বা আইওটি ভবিষ্যতে এক ‘প্রযুক্তি বিপ্লব’ তৈরি করবে। সব ইলেকট্রনিকস ডিভাইস একটি কেন্দ্রীয় সিস্টেমে যুক্ত থাকবে। স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ বা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়ে দূর থেকেও বাড়ির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিভাইসগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে। ফ্রিজ খাবারের স্টক পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় জিনিস স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্ডার দেওয়ার সক্ষমতাও অর্জন করবে। তার মতে, স্মার্ট হোম প্রযুক্তি জীবনকে আরও দক্ষ, সুবিধাজনক এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্বয়ংক্রিয় করে তুলবে। স্মার্ট ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি উৎপাদন খরচ বাড়ায়। দক্ষ জনবল সংকট উন্নত প্রযুক্তি উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রক জটিলতা, শুল্ক কাঠামো এবং বিনিয়োগ নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা শিল্পকে ধীর করে দেয়। ই-বর্জ্য ম্যানেজমেন্টের অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ থাকলেও ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি ও সরকারের সহায়ক নীতির কারণে বাজারের সম্ভাবনা অনেক। স্মার্ট প্রযুক্তি শক্তি সাশ্রয় ও পরিবেশবান্ধব জীবন নিশ্চিত করছে। গ্রী এয়ার কন্ডিশনারের স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট ব্যবহারকারীর রুটিন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। কনকা, গ্রী ও হাইকোর পণ্যে আধুনিক এনার্জি ইফিশিয়েন্ট প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যা পরিবেশবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী। ইনভার্টার কম্প্রেসর ও স্বয়ংক্রিয় অপারেশন পদ্ধতি শক্তির অপচয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সহায়তা করে।
মো. নুরুল আফছার বলেন, আমরা কনকা, গ্রীসহ সব স্মার্ট পণ্যে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছি। কনকা ফ্রিজের বৈশিষ্ট্য হলো; ডিজিটাল ডিসপ্লে ও ইনভার্টার প্রযুক্তি, মোবাইল থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য অপারেশন, ইকোনমি মোডে বিদ্যুৎ সাশ্রয়, অ্যাকটিভ কার্বন ডিওডোরাইজার গন্ধ মিশে যাওয়া রোধ, ফুড গ্রেড ম্যাটেরিয়াল (এফডিএ সার্টিফায়েড)। ভিটামিন ও গার্ডেন ফ্রেশ প্রযুক্তি ফল সবজি দীর্ঘ সময় সতেজ রাখে। ৬০ সেকেন্ডে ডোর অ্যালার্ম বাংলাদেশে প্রথম বিএসটিআই ফাইভ স্টার এনার্জি রেটিং এবং ৭১ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। গ্রী এসি আই ফিল টেকনোলজি: স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরামদায়ক তাপমাত্রা নির্ধারণ বিশ্বের প্রথম জি বুস্ট ইনভার্টার অতিরিক্ত স্থায়িত্ব ও শক্তি সাশ্রয়, ৬৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নরমাল কুলিং, কোল্ড প্লাজমা প্লাস হিউমিডিটি কন্ট্রোল ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ ব্যাকটেরিয়া নিষ্ক্রিয়করণ; ছয় স্তরের এয়ার ফিল্টার রুমের বাতাস সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ; এআই-চালিত হিউম্যান কমফোর্ট প্রযুক্তি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করছি, যেন গ্রাহকের অভিজ্ঞতা আরও নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও আধুনিক হয়। মো. নুরুল আফছারের দৃষ্টিতে আগামী এক দশকে ইলেকট্রনিকস ও এআই প্রযুক্তি মানুষের জীবনের প্রতিটি স্তরে যুক্ত হয়ে যাবে। তিনি ভবিষ্যৎ চিত্র তুলে ধরে বলেন, স্মার্ট ডিভাইস তাপমাত্রা, নিরাপত্তা, আলো-সবকিছু নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করবে। ফ্রিজ খাবারের তালিকা সাজাবে, রোবট ঘর পরিষ্কার করবে। ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী কাস্টমাইজড হোম এনভায়রনমেন্ট তৈরি হবে। তিনি বলেন, এআই ও নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে ভোক্তার অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে আমরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করছি। এজন্য চায়নার সঙ্গে যৌথ গবেষণা, বাজারের ভবিষ্যৎ চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রযুক্তি সংযোজন, পরিবেশ ও ভোক্তার প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য উন্নয়ন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণে আমরা সব সময় প্রস্তুত বলে জানান তিনি।