২০০৫ সালে লর্ডসে হাবিবুল বাশার যে ‘ব্যাগি গ্রিন’ টেস্ট ক্যাপটি পরিয়ে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিমকে, সেটি রং হারিয়ে এখন ধূসর বর্ণের হয়েছে। ৩৮ বছর বয়সি মুশফিকের কাছে ধূসর বর্ণের ক্যাপটিই ভালোবাসা, শেষ বলে কথা! ২০ বছর ধরে যত্নে রেখেছেন। ক্যারিয়ারে ১০০ টেস্ট খেলে ফেলেছেন। সব টেস্টেই ক্যাপটি পরেছেন সাবেক অধিনায়ক। মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টেস্ট খেলা মুশফিক ফিল্ডিং করেন ক্যাপটি পরে। মিরপুরের টেস্টটিকে মুশফিকের টেস্ট বললে কম বলা হবে! বিশ্বের ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলা মুশফিক আবার সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ১০৬ ও ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা মুশফিকের টেস্টটিকে তাইজুল ইসলামেরও বলা যায়! মুশফিকের টেস্টে মাইলফলক গড়েছেন তাইজুল। বাঁ-হাতি স্পিনার দেশের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ২৫০ উইকেট নিয়েছেন। আড়াই শ উইকেটের ক্লাবে তাইজুল নাম লেখেন দ্রুততম সময়ে। ৫৭ টেস্টে মাইলফলকটি গড়েন ৩৩ বছর বয়সি তাইজুল। ৫৭ টেস্টে আড়াই শ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে অবশ্য শ্রীলঙ্কার বাঁ-হাতি স্পিনার রঙ্গনাহেরাথ ও পাকিস্তানের লেগ স্পিনার দানিশ কানেরিয়ার। এখন তাইজুল ইসলামের সামনে আরও এগিয়ে যাওয়ার হাতছানি।
আয়ারল্যান্ডকে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। সিলেটে জিতেছিল ইনিংস ও ৪৭ রানে। মিরপুরে জিতেছে ২১৭ রানে। তাইজুল দুই টেস্টে উইকেট নিয়েছেন ১৩টি। সিলেটে ৫টি ও মিরপুরে ৮টি। সিরিজসেরা হয়েছেন। মিরপুরে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে স্পর্শ করেছিলেন দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিবকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে টপকে ২৫০ উইকেট ক্লাবে নাম লেখেন। নতুন মাইলফলক গড়ায় উচ্ছ্বসিত সাকিব অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন, তাইজুলের নামের পাশে ৪০০ উইকেট দেখছেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের কাছে থেকে অভিনন্দন পেয়ে অভিভূত তাইজুল, ‘সাকিব ভাই আমার দেশেরই মানুষ। দেশের হয়ে কেউ যদি ভালো কিছু করে, তাহলে পোস্ট দেওয়াটা আমিও মনে করি এটা মানে গ্রহণযোগ্যতা। অনেকের মতো সাকিব ভাইও পোস্ট দিয়েছেন। এটা ভালো লাগার বিষয়। একজন বড় প্লেয়ার যখন নিজ দেশের প্লেয়ারদের নিয়ে ভালো ভালো বার্তা দেয়, এটা একটা ভালো লাগার বিষয়। আমি সবসময়ই মনে করি, আমাকে নিয়ে যারা এ রকম পোস্ট দেয় বা যারা আমার কাছ থেকে আশা করে, আমি যেন তাদের আশাটাকে পূর্ণতা দিতে পারি ইনশাল্লাহ।’
তাইজুলের টেস্ট অভিষেক ২০১৪ সালে কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। অভিষেক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। একসময় সাকিবের ছায়া হয়ে খেলেছেন। এখন দেশের এক নম্বর বোলার। গত ১৪ বছরে ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করছেন। টানা পারফরম্যান্সের শুকরিয়া আদায় করেছেন আল্লাহর, ‘সর্ব প্রথম আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করছি। আপনি যতদিন পারফরম্যান্স করবেন, ততদিন আপনি টিমে থাকবেন। একটাই লক্ষ্য, পারফরম্যান্স। আমি সবসময় চেষ্টা করি, দলের জন্য পারফরম্যান্স করতে।’
সাকিব অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন তাইজুলের নামের পাশে ৪০০ উইকেট দেখতে চান। বাঁ-হাতি স্পিনার নিজে কি ভাবছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তাইজুল বলেন, ‘নিজেকে নিজে হারানোর কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। প্রথমেই একটি কথা বলেছি, দলে টিকে থাকতে হলে পারফরম্যান্স করতে হবে। পারফরম্যান্স করলে অটোমেটিক্যালি উইকেট চলে আসবে। আগামী দুই-তিন-পাঁচ বছরে কত টেস্ট খেলব, সেটার ওপরেই হয়তো বা আমি ৪০০ উইকেটের কাছে যেতে পারি। আমি আগে বলেছি, আমি চেষ্টা করব তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে।’ সাকিবের ইচ্ছা ৪০০ উইকেট। তাইজুল নির্দিষ্ট করেননি কোথায় গিয়ে থামবেন, ‘আগেও বলেছি, আমার কোনো টার্গেট নেই। আল্লাহ আমাকে যতদূর নিয়ে যাবে, আমি ততদূর যেতে রাজি আছি। আগে প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে পারতাম না। এখন করছি। এখন উইকেট শিকারে ওপরে আছি। পরের জেনারেশন যারা আসবে, তারা হয়তো বা আমাকে ছাড়িয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে আমিও ওটাই চাইব, ওরা যেন আমাকে ছাড়িয়ে যায়।’ টেস্ট সিরিজ শেষ। পরের টেস্ট সিরিজ চার মাস পর। বিস্তর গ্যাপ। টেস্ট সিরিজ শেষে বাংলাদেশ এখন তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলবে চট্টগ্রামে। প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড।