ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণ করেছে নির্বাচন কমিশন। নৌকা প্রতীক স্থগিত থাকায় বাকি প্রতীক প্রার্থীদের মধ্যে বরাদ্দ করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় এ সংশোধন গেজেট করা হয়েছে। বিধিমালার তফসিলে সংসদ নির্বাচনে ‘দলীয়’ ও ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীদের জন্য মোট ৬৯টি প্রতীক ছিল। এবার তা বাড়িয়ে ১১৫টি করা হলো। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৫০টি দল নিবন্ধিত রয়েছে। এ ছাড়া নিবন্ধন বাতিল ও স্থগিত রয়েছে আরও ৫টি। এসব দলের বিপরীতে প্রতীকও সংরক্ষিত রয়েছে। এবার নতুন কয়েকটি দলও নিবন্ধিত হতে যাচ্ছে। দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্যও প্রতীক সংরক্ষণে রেখেছে ইসি। নিবন্ধনপ্রত্যাশী দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শাপলা প্রতীক বিধিমালার তফসিলে রাখার দাবি করে আসছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ প্রতীকটি আর রাখেনি। সে ক্ষেত্রে দলটির আর শাপলা প্রতীক পাওয়ার সুযোগ নেই। নিবন্ধন পুনর্বহাল হওয়া জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীকও তালিকায় পুনর্বহাল হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা তালিকায় আছে। তবে এর প্রতীকটি স্থগিত বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার পর ইসি দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে।
১১৫টি প্রতীক : আপেল, আনারস, আম, আলমারি, ঈগল, উটপাখি, উদীয়মান সূর্য, একতারা, কাঁচি, কবুতর, কলম, কলস, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, কাপ-পিরিচ, কাস্তে, কেটলি, কুমির, কম্পিউটার, কলা, কুড়াল, কুলা, কুঁড়ে ঘর, কোদাল, খাট, খেজুর গাছ, গরুর গাড়ি, গাভী, গামছা;, গোলাপ ফুল, ঘণ্টা, ঘুড়ি, ঘোড়া, চাকা, চার্জার লাইট, চাবি, চিংড়ি, চেয়ার, চশমা, ছড়ি, ছাতা, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, ট্রাক, টেলিফোন, টেলিভিশন রয়েছে প্রতীকের তালিকায়। আরও আছে ডাব, ঢেঁকি, তবলা, তরমুজ, তারা, থালা, দাঁড়িপাল্লা, দালান, দেয়াল ঘড়ি, দোয়াত কলম, দোলনা, ধানের শীষ, নোঙ্গর, নৌকা (স্থগিত), প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলকপি, ফুলের টব, ফুলের মালা, ফ্রিজ, বক, বাঘ, বই, বটগাছ, বাঁশি, বেঞ্চ, বেগুন, বাইসাইকেল, বালতি, বেলুন, বৈদ্যুতিক পাখা, মই, মগ, মাইক, মোটরগাড়ি (কার), মশাল, ময়ূর, মাছ, মাথাল, মিনার, মোমবাতি, মোবাইল ফোন, মোড়া, মোরগ, রকেট, রিকশা, লাউ, লিচু, লাঙ্গল, শঙ্খ, সোনালি আঁশ, সেলাই মেশিন, সোফা, সিংহ, স্যুটকেস, হরিণ, হাত (পাঞ্জা), হাতঘড়ি, হাতপাখা, হাঁস, হাতি, হাতুড়ি, হারিকেন, হুক্কা, হেলিকপ্টার।
ইসিতে এনসিপির ফের আবেদন : নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন করে শাপলা, শাদা শাপলা অথবা লাল শাপলাকে প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এর একটি বরাদ্দ দিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর এ আবেদন করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে সব যাচাইবাছাই সম্পন্ন হওয়ার পর এবং নিবন্ধনের সব শর্ত প্রতিপালন করার ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু গত ২০ সেপ্টেম্বর কমিশনের সিনিয়র সচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার প্রতীক তালিকায় শাপলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং এ কারণে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। আবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের এমন স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত এবং এমন বক্তব্য অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের এমন একরোখা কার্যকলাপে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সব দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর জমা দেওয়া ওই আবেদনে আরও বলা হয়, সার্বিক বিবেচনায় আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে জাতীয় নাগরিক পার্টির অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে এবং এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতিপূর্বের স্বেচ্ছাচারী ও একরোখা মনোভাব পরিত্যাগ করবে এবং এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সব দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।