যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের নির্বাচন ও সংস্কারের বার্তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানাবেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটিই হবে দেশের গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি। পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ, এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে ডব্লিউটিওর সমর্থন প্রত্যাশার বিষয়টি স্থান পেয়েছে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকগুলোতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাইডলাইন বৈঠকগুলোতে ড. ইউনূসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনি প্রস্তুতি, আর্থিক সংস্কার, মানবিক সংকট মোকাবিলা ও কূটনৈতিক সক্রিয়তা ইতোমধ্যে ভিন্ন আবেদন তৈরি করছে।
নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘে রূপরেখা : স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা সংস্কার কার্যক্রম চালিয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও আস্থাহীনতার মধ্যে নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়া সহজ ছিল না। তবে প্রধান উপদেষ্টা এবার জাতিসংঘে স্পষ্ট করে জানাবেন যে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক হবে।’
বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক : অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ অধিবেশনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা জোরেগুইতা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুসসহ একাধিক বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল- বাংলাদেশের নির্বাচন, স্বাস্থ্যবিমা সম্প্রসারণ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল উদ্ভাবন ও রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে অনুরোধ জানায়।
গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি : প্যারিসের মেয়র অ্যানি হিদালগোর সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য এ নির্বাচন একটি নতুন সূচনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা পেরিয়ে জনগণ পরিবর্তন চায়। অন্তর্বর্তী সরকার সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করছে।’ আলোচনায় তারা সামাজিক ব্যবসা, অলিম্পিক আয়োজন, নারী নেতৃত্ব ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও মতবিনিময় করেন।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা : বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস বাংলাদেশের আর্থিক খাতে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে অন্তত ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই অর্থ ফেরত আনা গেলে দেশের উন্নয়ন খাতে তা ব্যবহার করা সম্ভব হবে। মঙ্গলবার বিকালে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে বৈঠকের বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এলডিসি উত্তরণে ডব্লিউটিওর পূর্ণ সমর্থন : বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হবে। কিন্তু এ সময়ে বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য ডব্লিউটিওর সহায়তা জরুরি। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. এনগজি অকোনজো-ইওয়েলার সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মূলত পোশাকনির্ভর। এলডিসি সুবিধা হারালে এই খাতে বড় ধাক্কা লাগবে। তাই রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং বাণিজ্য সুবিধা বজায় রাখতে ডব্লিউটিওর সক্রিয় সমর্থন প্রয়োজন।’
থেয়ারওয়ার্ল্ডের বিশেষ সম্মাননা : নিউইয়র্কে থেয়ারওয়ার্ল্ড আয়োজিত বার্ষিক শিক্ষা ডিনারে অধ্যাপক ইউনূসকে দেওয়া হয় ‘আনলক বিগ চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’। দারিদ্র্যবিমোচন, শিক্ষা, সামাজিক ব্যবসা ও নারী ক্ষমতায়নে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ট্রাম্পের সংবর্ধনায় ড. ইউনূস, বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ : নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রফেসর ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমন্ত্রণে যোগ দেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন। এর মধ্যে ছিলেন স্পেনের রাজা ফেলিপে ষষ্ঠ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জশেরিং টোবগে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জন্য মার্কিন বিশেষ দূত সার্জিও গোর সাক্ষাৎ করেন।