ঘনিয়ে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর এ নির্বাচন আয়োজনে দেশবাসীর নজর এখন ডাকসুর দিকে।
নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের প্রচারণা। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একের পর এক বাহারি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। আচরণ বিধিমালার লঙ্ঘন সতর্কতায় কৌশলী প্রচার অব্যাহত রেখেছেন প্রার্থীরা।
ছাত্রসংগঠনগুলোর প্যানেলের পাশাপাশি নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। ডিজিটালের এ যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে বিভিন্ন কৌশলী প্রচারণাও। নির্বাচনি আচরণবিধির কারণে গতকাল সরেজমিন ক্যাম্পাসের কোনো স্থাপনা বা দেয়ালে বিলবোর্ড, পোস্টার দেখা যায়নি। তবে লিফলেট ও হ্যান্ডবিল প্রচার করছেন প্রার্থীরা। বিগত বছরগুলোতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জোর করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ থাকলেও সব রাজনৈতিক প্যানেল থেকেই এ সংস্কৃতির অবসানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের আসন সংকট নিরসন, চিকিৎসাসেবার উন্নয়ন করার। দিয়েছেন আবাসিক হলের খাবারের মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি। বিশেষ করে নারী স্বাস্থ্য বিবেচনায় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অনধিকার প্রবেশ রোধের মতো প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রার্থীরা। রেজিস্ট্রার ভবনের বহুল সমালোচিত ‘লাঞ্চের পরে আসেন’ সংস্কৃতি দূর করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন অধিকাংশ প্রার্থীই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসহ আশপাশে মাদকদ্রব্য সেবনের অভিযোগ থেকে বেরিয়ে কোনো কোনো প্রার্থী হল সংসদে নির্বাচিত হলে গাঁজাসেবীদের হল থেকে উৎখাত করার মতো প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছেন।
প্রতিশ্রুতি নয়, পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ স্লোগানে গতকাল ডাকসু নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ। ইশতেহারে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে আধুনিক, আনন্দময়, বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ হিসেবে গড়ে তোলাসহ ১০টি মূল অঙ্গীকার করেছে প্যানেলটি। নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কারিকুলাম আধুনিকায়ন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিতকরণ, পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন, বিভিন্ন সেবার ডিজিটালাইজেশনসহ শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের পাশে চান ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। নির্বাচনি ইশতেহার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করলেও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। নির্বাচন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সাদিক কায়েম-ফরহাদ-মহিউদ্দীন প্যানেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ার পথযাত্রায় আমরা থামব না’ স্লোগান দিয়েছে এ প্যানেল। শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ প্যানেলের প্রার্থীরা বলছেন, আমরা বিজয়ী হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা দূর হবে। হলে সিট পেতে শিক্ষার্থীকে কোনো চিন্তাই করতে হবে না। হলগুলোতে পুষ্টিকর ও মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করারও প্রতিশ্রুতি দেন তারা। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সাবেক সমন্বয়কদের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের কাদের-বাকের-আশরেফা প্যানেল ডাকসুতে নির্বাচিত হলে গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার যে কোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নিজেদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিক থাকার কথাও জানিয়েছেন তারা। উমামা-সাদী-জাহেদের ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলার। তারা শিক্ষার্থীদের বলছেন, এ ক্যাম্পাস কোনো সাদা-নীল-গোলাপি দলের হবে না, কেবল হবে শিক্ষার্থীদের। আর শিক্ষার্থীরাই ক্যাম্পাসের গতিপথ নির্ধারণ করবে। ডাকসু ফর চেঞ্জ স্লোগানে বিন ইয়ামিন-সাবিনা-রাকিবুল প্যানেল ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান বেড ওয়ান টেবিল’ প্রতিশ্রুতিসহ ১০ দফা নিয়ে কাজ করার ঘোষণা করেছেন। বাম সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের ইমি-মেঘমল্লার-জাবির প্যানেল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে কর্মমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মানোন্নয়ন করা এবং র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক উন্নয়নে কাজ করার কথা জানান তারা। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত ইয়াসিন-খায়রুল-আলাউদ্দিনের সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল গণরুম-গেস্টরুমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়সহ নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।