শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যথার্থ উত্তরসূরি তারেক রহমান। বাবা ও মায়ের রাজনৈতিক দর্শন ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যিনি বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের সঙ্গে দেশের বৃহত্তম রাজনীতিক দল বিএনপিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ৬ অক্টোবর তারেক রহমান দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দেন। এর একটি লন্ডনের খ্যাতনামা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে অপরটি বিবিসি বাংলায়। সাক্ষাৎকার দুটি দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত দেশপ্রেমীদের মধ্যে নতুন অনুপ্রেরণা ও রাজনৈতিক উত্থানের আশাবাদ জাগিয়েছে। বহু বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর দেশের শান্তিপ্রিয় ও উন্নয়নকামী জনগণ এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক, প্রতিনিধিত্বশীল ও দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং রাষ্ট্রে সুশাসন ফিরবে। তারেক রহমান ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, তিনি ‘দৃঢ়ভাবে আত্মবিশ্বাসী’ যে আসন্ন নির্বাচনে অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর সে নির্বাচনে জনগণের রায়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থান প্রকৃত অর্থে সম্পন্ন হবে না যত দিন না দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তারেক রহমান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বিএনপির বিজয়ে কোনো সন্দেহ নেই এবং এককভাবেই সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত হবে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, জনমত জরিপে বিএনপি এগিয়ে রয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির ভোটের পর তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। আরও জানানো হয় যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনার দলকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছেন।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলমান মামলা প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে এবং যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হন, তবে দলটি কীভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করা হয় যে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানকে কোনো একক দল বা ব্যক্তি পরিচালনা করেনি; এটি ছিল জনগণের আন্দোলন। এই আন্দোলনের নেপথ্য নকশাকার ছিলেন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ, যারা দলমতনির্বিশেষে এতে অংশ নিয়েছিলেন।
স্বাধীনতার মহান ঘোষক ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের আলোকে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে দল এবং দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছিল যার সবগুলোই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এক-এগরোর সরকারের সময় তারেক রহমানের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়। যার ফলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য প্রবাসে থাকতে হয়েছে। গত ১৭ বছরের স্মৃতিচারণের সময় তিনি দুঃখ করে উল্লেখ করেন তাঁর ছোট ভাই আরাফাত রহমানের করুণ মৃত্যু, তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়ার ওপর অমানুষিক রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতা এবং তাঁর বাবা শহীদ জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে ওই স্থানকে নিশ্চিহ্ন করে দেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এই কথাগুলো মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। নির্বাসনে থাকার সময় তাঁর যোগাযোগের অনেক সীমাবদ্ধতাও ছিল এবং আদালতের আদেশে বক্তব্য প্রচারে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং এখনো দিয়ে চলেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, বিএনপি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেলে ‘প্রতিশোধের চক্র’ ভেঙে দেবে। এর অংশ হিসেবেই গত আগস্ট থেকে ৭ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলা হয় যে বাংলাদেশের স্বার্থই সবার আগে থাকবে। বাংলাদেশের স্বার্থ অটুট রেখে যা যা সম্ভব তিনি করবেন। ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য অংশ আদায়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, সীমান্তে ফেলানীর মতো মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি কখনো মেনে নেওয়া হবে না । শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় প্রসঙ্গে বলেন, যদি এ ধরনের আশ্রয় দেওয়া হয় এবং তাতে বাংলাদেশের জনগণের বিরাগ সৃষ্টি হয়, তাহলে সম্পর্ক শীতল থাকবে- এমন অবস্থান জনগণের পক্ষ থেকেই নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বলা হয় যে বিএনপির মৌলিক নীতি হলো- ‘বাংলাদেশ সবার আগে।’ জনগণ, দেশ ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় স্বার্থকেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা হবে। সবার কাছেই আজ স্পষ্ট যে তারেক রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি ও জিয়াউর রহমানের অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হচ্ছেন। আমি নিজে সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে জাগো ছাত্রদল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক পথচলা শুরু করি। জাসাস প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পরবর্তী সময়ে জাসাসের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করি। শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিতেও তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছি। সেই সুবাদে জিয়া পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সেই অভিজ্ঞতা আজও মনে আছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকার বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেছে এবং অসংখ্য বিএনপি কর্মী-সমর্থকের ওপর নির্যাতন, গুম-খুন ও দমন চালিয়েছে। অন্তত ১ হাজার ৫০০ কর্মী দুঃশাসনবিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক আহত বা পঙ্গু হয়েছেন। তবু বিএনপিকে স্তব্ধ করা যায়নি। শহীদ জিয়ার গড়ে তোলা দল আজ সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা নিয়ে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। মহান রাষ্ট্রনায়ক
জিয়াউর রহমানের দর্শন ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আলোকে পাহাড় এবং সমতলের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুদৃঢ করা। একটি রেইনবো স্টেট গড়ে তোলা যেখানে সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। বিএনপির রাজনীতির লক্ষ্য সুস্পষ্ট। শহীদ জিয়াউর রহমানের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা। একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমাদের প্রত্যাশা, তারেক রহমান হবেন শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়ার যথার্থ রাজনৈতিক উত্তরসূরি। প্রায় ১৮ বছরের রাজনৈতিক ব্যর্থতার দুঃসময় পেছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার একমাত্র বিকল্প হলো তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জাগরণ। জনগণ চায় গণতান্ত্রিক ও সুশাসনভিত্তিক রাজনীতি। যা জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক চিন্তাধারার ধারক এবং আধুনিক বাংলাদেশের পথপ্রদর্শক বলে বিবেচিত হবে।
লেখক : বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক