আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় শনিবার গভীর রাতে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলাকে ‘উসকানি’ আখ্যা দিয়ে এর কড়া নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। দেশের প্রতিরক্ষা রক্ষায় যেকোনো হামলার “কঠোর ও কার্যকর জবাব” দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে শেহবাজ বলেছেন, “পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কোনও আপস করা হবে না। প্রতিটি উসকানির জবাব কঠোর ও কার্যকরভাবে দেওয়া হবে।”
আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসন তাদের দেশের মাটি সন্ত্রাসীদেরকে ব্যবহার করতে দিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
শনিবার রাতে আফগান সেনারা পাকিস্তানের সীমান্ত চৌকিগুলিতে গোলাবর্ষণ করে। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এটি এই সপ্তাহে পাকিস্তানের বিমান হামলার প্রতিশোধে করা হয়েছে। আফগান কর্মকর্তাদের দাবি, সংঘর্ষে পাকিস্তানের বহু সেনা নিহত হয়েছে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা আফগানিস্তানের ১৯টি পোস্ট দখল করেছেন—যেখান থেকে হামলা চালানো হয়েছিল। পাকিস্তানের গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, পাকিস্তানি সেনারা একটি দখল করা আফগান পোস্টে দেশটির পতাকা উত্তোলন করছেন, যদিও বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ঠান্ডা। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে, আফগান কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে—যা কাবুল অস্বীকার করে আসছে।
প্রায় ২৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভয়াবহ সংঘর্ষের পর রবিবার গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তপথগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই সপ্তাহে পাকিস্তানের বিমান হামলা, যা ইসলামাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি, তা মূলত কাবুলে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) প্রধান নূর ওয়ালি মেহসুদের অবস্থান লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল বলে রয়টার্স জানিয়েছে। তিনি বেঁচে আছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
টিটিপি, যাদের সঙ্গে আফগান তালেবানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, ২০০০ সালের শেষ দিক থেকে পাকিস্তানে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাগুলোর জন্য দায়ী।
শেহবাজ শরিফ বলেন, ইসলামাবাদ বারবার কাবুলকে জানিয়েছে আফগান মাটিতে অবস্থানরত “সন্ত্রাসী উপাদানরা” পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আফগানিস্তানের কিছু উপাদানের সহায়তা পাচ্ছে। পাকিস্তান আশা করে আফগান অন্তর্বর্তী সরকার নিশ্চিত করবে যে তাদের ভূখণ্ড পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না।”
অন্যদিকে, রবিবার সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, তাদের বাহিনী ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে, ২০টি পাকিস্তানি পোস্ট দখল করেছে এবং নিজেদের নয়জন সদস্যকে হারিয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা রাতে গুলি বন্ধ করেছিলাম, কিন্তু পাকিস্তান গুলি চালাতে থাকে। যদি পাকিস্তান আফগানিস্তানে হামলা চালানো অব্যাহত রাখে, আমরাও পাল্টা জবাব দেব।”
মুজাহিদ আরও দাবি করেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা চায় না এবং দেশটিতে দায়েশ (আইএস) যোদ্ধাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তিনি বলেন, “পাকিস্তানকে হয় দায়েশ সদস্যদের আমাদের হাতে তুলে দিতে হবে, নয়তো দেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে।”
এমন এক সময়ে এই সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হলো, যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি ভারত সফরে রয়েছেন। সেখানে তিনি শনিবার বলেন, “পাকিস্তান যেন তার অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য আফগানিস্তানকে দায়ী না করে।”
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এক্সে পোস্টে লিখেছেন, “আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ভারতে সফরে এবং সেখানে পাকিস্তানবিরোধী বক্তব্যগুলো যৌথ ঘোষণার রূপ পাচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই আফগানিস্তান পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে—এটা তাৎপর্যপূর্ণ।”
সূত্র: আরব নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজিম