নির্বাচনের স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির প্রত্যাশা, জুলাই সনদ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আট দফা অঙ্গীকারনামাকে অপ্রয়োজনীয় বলেও মনে করছে দলটি। গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
জুলাই জাতীয় সনদ দ্রুত চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির কাছে সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মতামত চায়। এরপর ইমেইলের মাধ্যমে বিএনপি কয়েকটি বিষয়ে মতামত জমা দিয়েছে। বাকি বিষয়গুলোতে কমিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে চূড়ান্ত মতামত দেবে দলটি। একই সঙ্গে জুলাই সনদের চূড়ান্ত মতামতে আগের অবস্থান ধরে রাখার বিষয়টি আলোচনা হয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। সূত্র জানায়, বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করেছে বিএনপি। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে কমিশনের আলোচনা শুরু হবে। সেখানেই অমীমাংসিত ১০টি ইস্যু বিশেষ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর ওপর আবারও যুক্তিসহ দলীয় মতামত তুলে ধরা হবে। যেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন নেই সেগুলো অধ্যাদেশ জারি বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আর যেসব ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন, সেগুলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সংসদে নেওয়া উচিত। রাজনৈতিক সমঝোতা দলিল জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে রাখার বিপক্ষেও অনড় রয়েছে বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দুইজন সদস্য অভিমত দেন রাজনৈতিক দলগুলো যখন এই সনদে স্বাক্ষর করবে, সেটিই মূলত অঙ্গীকার। এর বাইরে আলাদা করে আর অঙ্গীকারের প্রয়োজন নেই। তারপরও পৃথকভাবে অঙ্গীকারনামা রাখতে হলে সেটি যৌক্তিক পর্যায়ে থাকতে হবে। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এর আইনি বৈধতা এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া খুঁজে বের করা যাবে।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সনদের অঙ্গীকারনামার কিছু বিষয় বিএনপির কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে। বিকল্প প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার সময় দেওয়া হবে। সংবিধানের ওপরে স্থান পায়- এমন কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা করছি।’ সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে বৈঠক শুরু হয়। আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক শেষ হয় রাত ১১টার দিকে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (ভার্চুয়ালি), ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।