ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিদেশি বিনিয়োগকারী সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক ও বাজার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। তবে জ্বালানিসংকট ও এলডিসি উত্তরণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ও পূর্বাভাসযোগ্য পরিবেশের ওপর জোর দেন তাঁরা। জাপানি বিনিয়োগকারী তাকাও হিরোশি বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগ আকর্ষণের মূল শর্ত।’ গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড আয়োজিত দুই দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এ তাঁরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। দেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং পুঁজিবাজারে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে আয়োজিত এ সম্মেলনে শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশ নেন। সম্মেলনে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একটি বড় দলসহ সৌদি আরব, কানাডা ও ঢাকায় অবস্থিত জাপান দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, শিল্পোন্নয়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির নানান দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরী ও কমিশনার মো. সাইফউদ্দিন, কনটেক্সচুয়াল ইনভেস্টমেন্ট এলএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকাও হিরোসে, এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ফান্ড ম্যানেজার রুচির দেশাই, বিএসইসি ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান মেহেরিয়ার এম হাসান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পিএলসির চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) পিএলসির চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান। ?স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম। ?সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদরে জন্য একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। যেখানে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সীমাহীন সুযোগ বিদ্যমান। বিশ্বের অনেক দেশ গণ অভ্যুত্থান কিংবা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তবে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যতিক্রম।’ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এমন উদ্যোগ পুঁজিবাজার লেনদেনের খরা কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরতে সহায়তা করবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য শুধু বাজারের স্থিতিশীলতাই যথেষ্ট নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, স্বচ্ছতা এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত সমর্থনও জরুরি। বৈশ্বিক বিনিয়োগের মানচিত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ‘উদীয়মান সীমান্ত বাজার’। কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে একে শক্তিশালী বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত করা সম্ভব।
বিনিয়োগ সম্মেলনে জামায়াত : বিদেশি বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোহাম্মাদ মোবারক হোসাইনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তাঁরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানান। এ সময় তাঁরা বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসায়িক নিরাপত্তা ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাঁদের দল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন।
একই সঙ্গে এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিদেশি বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। জামায়াত প্রতিনিধিদলে ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম রাজু, সেক্রেটারি ডা. আনোয়ারুল আজিম এবং জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের পিএস মো. হাসান ফয়জুল্লাহ।