দুর্গাপূজা মানেই দেবীর আরাধনা, আনন্দ আর ভক্তির আবহ। তবে রাজশাহী শহরের মালোপাড়াস্থ শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দির এবারের দুর্গোৎসবকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। আকারে ছোট এবং স্বল্প বাজেটে নির্মিত হলেও তাদের প্যান্ডেল হয়ে উঠেছে নারীশক্তি ও সমাজসচেতনতার এক জোরালো বার্তার বাহক।
দেবী দুর্গাকে নারীশক্তির প্রতীক ধরে এবারের থিম সাজানো হয়েছে নারীর জীবন, সংগ্রাম ও সম্মানের আখ্যান ঘিরে। কন্যাভ্রূণ থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন, অবিবাহিত অবস্থায় সামাজিক চাপ, সংসার জীবনের সংগ্রাম, বার্ধক্যে অবহেলা-সব অধ্যায় উঠে এসেছে গোটা থিমে।
প্যান্ডেলের বিভিন্ন অংশে ফুটে উঠেছে কন্যাভ্রুণের অস্তিত্বের নীরব যন্ত্রণা, ইভটিজিংয়ের ভয়াবহতা, চার দেয়ালে বন্দি নারীর একাকিত্ব, সংগ্রামী নারীর দৃঢ় প্রত্যয় এবং বৃদ্ধাশ্রমে অবহেলিত নারীর করুণ বাস্তবতা। দেবীমূর্তির শোভায় যেমন লক্ষ্মী ও সরস্বতীর শান্ত সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি চণ্ডীর শক্তিও প্রতিফলিত হয়েছে।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুনন্দন দাস বলেন, ‘আমরা চাই মানুষ দেবীর পূজার আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি নারীর অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবুক।’
সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী পাপন চন্দ্র রায় জানান, ‘দুর্গোৎসব শুধু আনন্দের উৎসব নয়, এটি সচেতনতার মঞ্চও হতে পারে। আমাদের উদ্দেশ্য প্রতিবাদ নয়-বরং নারীর সংগ্রামী জীবনকে উৎসবের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা।’
কোষাধ্যক্ষ রতন পাল বলেন, ‘আশা করি, এই থিম নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে নতুন চিন্তার জন্ম দেবে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটাবে।’
দর্শনার্থীরাও জানান, আকারে ছোট হলেও প্যান্ডেলটির বার্তা বিশাল। সরল উপস্থাপনা, শক্তিশালী কবিতা ও প্রতীকী সাজসজ্জা দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। তারা মনে করেন, আয়োজকরা প্রমাণ করেছেন-পূজার মঞ্চ শুধু আনন্দের নয়, সামাজিক সচেতনতারও একটি প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ