বাংলাদেশে বিনিয়োগের বাধার জন্য পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাধাগুলো হচ্ছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত অর্থায়ন, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব, বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য অন্যায্য করের বোঝা ও দুর্নীতি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা কমাতে ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করা হয়েছে। যেমন বিদ্যুৎ পরিষেবা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ এখনো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর কয়েক সপ্তাহ ধরে সহিংস দমনপীড়নের পর ৫ আগস্ট, ২০২৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনের সংস্কারের কাজ শুরু করে। কিন্তু দৈনন্দিন নিয়ন্ত্রক দৃশ্যপটের বেশির ভাগই অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া আর বেশি আমদানির কারণে বাংলাদেশ বড় ধরনের বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতিতে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২১ সালের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেখানে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল, ২০২৪ সালে তা নেমে আসে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। পরে আবার একটু বেড়ে ২০২৫ সালের মার্চে দাঁড়ায় ২০.৪ বিলিয়ন ডলারে। আরও বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার যখন ঘাটতি ছিল ঠিক তখনই এক বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। ফলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৮৫৭ কোটি ডলারে। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে, যাতে খাতটিকে বিশ্বমানের হিসেবে তৈরি করা যায়। তবে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের কাজ এখনো একেবারে শুরুর পর্যায়ে আছে। ধীরগতির ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা (যেটা সংস্কারের আওতায় আছে) এবং বিকল্প বিরোধ মীমাংসা ব্যবস্থার অভাবের কারণে ব্যবসায়িক চুক্তি বাস্তবায়ন ও বিরোধ নিষ্পত্তি দ্রুত এবং ন্যায্যভাবে হচ্ছে না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মেধাস্বত্ব ও শ্রম অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও অন্তর্বর্তী সরকার তেমন কার্যকর নয়। সরকার মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় যথেষ্ট সম্পদ দেয় না। গত ১০ বছরে তৈরি পোশাকশিল্পে অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তায় কিছু অগ্রগতি হলেও শ্রমিকদের সংগঠন গড়া এবং যৌথভাবে দর কষাকষি করার অধিকার এখনো বড় আইনি বাধার মুখে।