যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করায় দেশটির বাজারে প্রতিযোগী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশি পণ্যে পাল্টা শুল্ক একই, অর্থাৎ ২০ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর আগেই ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ হয়। চীনের সঙ্গে এখনো চুক্তি হয়নি। তবে বর্তমানে চীনের ওপর ৩০ শতাংশ ও মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকায় স্বস্তি ফিরেছে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া। এর মধ্যে ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ, চীনা পণ্যে ৩০, বাংলাদেশের পণ্যে ২০, ভারতের পণ্যে ২৫, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পণ্যে ১৯ এবং কোরিয়ার পণ্যে ১৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৪১ শতাংশ শুল্কহার সিরিয়ার ওপর। বেশি হার আরোপ হওয়া দেশগুলোর মধ্যে লাওস ও মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের শুল্ক ২০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রপ্তানি করা তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যে ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার হলে ওই পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। এই সুবাদে ভবিষ্যতে চীন, ভারত, মিয়ানমারও ভিয়েতনাম থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কার্যাদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের পোশাকশিল্পের বাজার হারানোর যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা দূর হয়েছে। চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক থাকায় সেখান থেকে প্রচুর কার্যাদেশ কমবে। তার একটা অংশ পেতে পারে বাংলাদেশ। ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় সেখান থেকেও বাংলাদেশে কার্যাদেশ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকেও আসবে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ পোশাক তুলাভিত্তিক। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কসংক্রান্ত সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যদি পণ্যে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল যেমন আমেরিকার তুলা ব্যবহার হয়, তাহলে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি শুল্ক থেকে মুক্তি পাব। এতে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা আরও বাড়বে।’
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘আমরা যদি বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে পারি, তবে ভবিষ্যতে চীন ও ভিয়েতনাম থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্যাদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’ বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, এই সাফল্য বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক খাতের জন্য বড় অর্জন এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শুল্ক কমানোর মাধ্যমে রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
অর্থনীতিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের নির্বাহী চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘আগে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল তা এখন কিছুটা কমেছে। রপ্তানিকারকদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর। মূল স্বস্তি পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে আমাদের জন্য নতুনভাবে কোনো চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়নি। ভারত আমাদের চেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হবে আর ভিয়েতনাম দেবে আমাদের সমান। মোটাদাগে এরাই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকার বাজারে। এরপরও কিছু ঝুঁকি রয়েছে। ২০ শতাংশ শুল্ক এটা কে বহন করবে। ভোক্তার ওপর ছাপিয়ে দিলে চাহিদা কমে যাবে। এরপর রপ্তানি কমে যাবে। এ ২০ শতাংশ যেন আমদানি রপ্তানিকারক, বায়ার ও ব্র্যান্ড ভাগ করে নেয়। নিঃসন্দেহে বলা যায়, নতুন করে কোনো সুবিধা তৈরি হয়নি। প্রতিযোগীদের তুলনায় নতুন করে কোনো অসুবিধায় পড়িনি। আগে অনেকগুলো কার্যাদেশ আটকে ছিল এখন সেগুলো আবার আসতে শুরু করবে।’