সরল দোলকের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটির রাশ শেষ পর্যন্ত ধরে ফেলে বাংলাদেশ। জিততে শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ১ উইকেট। পাকিস্তানের দরকার ১৩ রান। উইকেটে তখন পাকিস্তানের দুই টেল এন্ডার ড্যানিয়েল আবদুল্লাহ ও সালমান মির্জা। বোলিংয়ে টাইগার ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বলে ড্যানিয়েল চার মেরে জমিয়ে তোলেন ম্যাচ। ৫ বলে দরকার ৯ রান। মুস্তাফিজের দ্বিতীয় বলে ফের তুলে মারেন ড্যানিয়েল। কিন্তু ডিপ মিডউইকেটে শামীম হোসেন পাটোয়ারি ক্যাচ ধরতে ভুল করেননি। ড্যানিয়েল আউট। মুস্তাফিজ দুই হাত আকাশ পানে তুলে জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতেন। ৮ রানে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ জিতেছে। অবশ্য ২০১৫ সালে এক ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। লিটনের নেতৃত্বে এ নিয়ে টাইগাররা টানা দ্বিতীয় টি-২০ সিরিজ জিতল। সিরিজটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের উৎসর্গ করা হয়েছে।
এর আগে শ্রীলঙ্কাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল। লিটনের নেতৃত্বে টানা চতুর্থ ম্যাচ জিতল টাইগাররা। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ আগামীকাল। জাকের আলি অনীকের গতকালের ব্যাটিংয়ের মাঝে অনেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্সের ছায়া খুঁজে পেয়েছেন! প্রোটিয়াস কিংবদন্তি ব্যাটিং করতেন ৩৬০ ডিগ্রি ভঙ্গিতে। মিরপুরে গতকাল জাকের একই ভঙ্গিতে ব্যাটিং করেছেন। ৫৫ রানের ইনিংসটি খেলেছেন ৪৮ বলে ১ চার ও ৫ ছক্কায়। তার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ২০ ওভারে ১৩৩ রান করে বাংলাদেশ। ৩২ রানে জীবন পেলেও জাকের ৩৩ ম্যাচ ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি করতে সময় নেননি। শেষ ওভারে দুই ছক্কায় পঞ্চাশের ঘর পার করেন। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দল যখন কোণঠাসা তখনই হাল ধরেন জাকের। পঞ্চম উইকেট জুটিতে জাকের ও মেহেদি হাসান ৫৩ রান যোগ করেন ৪৯ বলে। মেহেদি ৩৩ রান করেন। প্রথম ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার পারভেজ হোসেন ইমন সাজঘরে ফেরেন ১৩ রানে। প্রথম ম্যাচে ১১০ রানে অলআউট হওয়া পাকিস্তানের জন্য ১৩৪ রানের টার্গেট একেবারেই কম ছিল না। ব্যাটিং করতে নেমে মেহেদি হাসান ও শরিফুল ইসলামের সাঁড়াশি বোলিংয়ে ৪.৪ ওভারে ১৫ রানে ৫ উইকেটে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল পাকিস্তান তাদের টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হবে। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৪ রানে অলআউট হয়েছিল। আবার মিরপুর স্টেডিয়ামে সর্বনিম্ন রানে অলআউটের সম্ভাবনাও জেগেছিল। ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ড ৬০ রানে অলআউট হয়েছিল। ৪৭ রানে ৭ উইকেটের পতন হলে খেলা হেলে পড়েছিল লিটন বাহিনীর দিকে। সেখান থেকে সপ্তম উইকেট জুটিতে আব্বাস আফ্রিদি ও ফাহিম আশরাফ ৪১ রান যোগ করে ম্যাচে ফেরান পাকিস্তানকে। ৮৮ রানে অষ্টম উইকেটের পতনের পরও ম্যাচে পাকিস্তানের আশা জিইয়ে রাখেন ফাহিম। ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হাসানকে ছক্কা মেরে হাফসেঞ্চুরি করেন ফাহিম। ওভারের শেষ বলে ফাহিমকে ব্যক্তিগত ৫১ রানে বোল্ড করেন রিশাদ। শেষ ওভারের সমীকরণ দাঁড়ায় ১৩ রান। পাকিস্তান অলআউট হয় ১২৫ রানে।