উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বোন নাজিয়ার পর এবার ভাই নাফিও মারা গেল।
দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যায় নাফি আশরাফ (৯)। এর আগে সোমবার রাত আড়াইটার দিকে মৃত্যু হয় তার বড় বোন তাহিয়া আশরাফ নাজিয়ার (১৩)। ভাই-বোন দুজনই উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। নাজিয়া তৃতীয় শ্রেণিতে এবং নাফি প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।
তাদের বাবা মো. আশরাফুল ইসলাম এবং মা তাহমিনা কামারপাড়ার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার পর প্রথমে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ এবং নাজিয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
নাজিয়া মারা যাওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে তাকে দাফন করতে যান বাবা আশরাফুল। তখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন মা তাহমিনা। তার চোখের সামনে মেয়ের মৃত্যু হয়, আর কিছুক্ষণ পর ছেলেও চিরবিদায় নেয়।
নাজিয়ার মা বলেন, “আমার মেয়ের শরীর এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে প্রথমে চিনতেই পারিনি। বারবার ডাকলে শুধু বলেছে, ‘আম্মু, আমার অনেক পিপাসা লাগছে, আইসক্রিম খেতে চাই’। ভাইয়ের খবরও জানতে চেয়েছিল। বলেছিল, ‘আম্মু, নাফি কেমন আছে?’ আমি বলেছিলাম, সে ভালো আছে। তারপর মেয়েটা বলল, ‘আম্মু, আমি কখন বাসায় যাব?’ আমি বলেছিলাম, কাল সকালে। তখন যা খেতে চাইবে তাই দেব। এরপর কয়েকটা জোর নিঃশ্বাস নিয়ে মেয়েটা আমার চোখের সামনে মারা গেল।”
নাফিও কয়েক ঘণ্টা পর একই পরিণতির শিকার হয়। মৃত্যুর আগে সে কেবল একবার বলেছিল, ‘আম্মু আমি আরিয়ান’। এরপর আর কোনো শব্দ করেনি।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, “নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ ফ্লেইম বার্ন হয়েছিল। তার অবস্থাও ছিল অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক