নিষিদ্ধ চরমপন্থিদের একসময়ের অভয়ারণ্য খুলনায় একের পর এক খুন নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। প্রকাশ্যে খুনাখুনির ঘটনায় আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা ও আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিএনপির স্থানীয় নেতারা পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করে শীর্ষ কর্তাদের অপসারণের দাবিতে কর্মসূচিও পালন করেছে। তবে পুলিশের দাবি- অধিকাংশ খুনের ঘটনা ঘটেছে মাদককেন্দ্রিক। এ ছাড়া এলাকার আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক অন্তকোন্দল এবং চাঁদাবাজির ঘটনাও এর জন্য দায়ী। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে নগরীতে ২৭টি হত্যার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আধিপত্য দ্বন্দ্বে হত্যাকাে র ঘটনা ঘটে ৮টি। সর্বশেষ ১১ জুলাই কুয়েট সংঘর্ষের সময় রামদা হাতে ভাইরাল হওয়া যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বিএনপির শীর্ষ নেতারা একে রাজনৈতিক খুন বলে দাবি করছেন।
নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। এর দায় পুলিশ কমিশনার এড়াতে পারেন না।
মাদকের দ্বন্দ্বে টার্গেট খুন : মাদক ব্যবসার এলাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে ২৭ জুন রূপসার রাজাপুর এলাকায় তিন যুবককে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সাব্বির নামে এক যুবক ঘটনাস্থলেই মারা যান। ২৮ মে মাদকের অর্থ লেনদেন দ্বন্দ্বে নগরীর দক্ষিণ টুটপাড়ায় রনি সরদার (২৪) দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন। বিরোধের কারণে দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে থাকা রনিকে ডেকে এনে হত্যা করা হয়। ২৩ জানুয়ারি ময়লাপোতা মোড়ে সাদিকুর নামে আরেক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যার ঘটনায় পুলিশি তদন্তে মাদক ব্যবসাসংক্রান্ত এলাকাভিত্তিক ভাগাভাগি বা অধিপত্যকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
নিষিদ্ধ চরমপন্থি দলের অধিপত্য বিস্তার : ১৬ মার্চ ?শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শাহীনুল হক শাহীনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি চরপন্থি নেতা শহীদ ওরফে হুজি শহীদ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ৯ জানুয়ারি চরমপন্থি দ্বন্দ্বে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে খুন হন খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু। তিনিও চরমপন্থি নেতা হুজি শহীদ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। পুলিশের কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, সরকার পরিবর্তনের পর স্থিমিত থাকা দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থি নেতাদের অনেকে এলাকায় ফিরে দল গোছানোসহ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। গত শুক্রবার দুপুরে গুলি ও পায়ের রগ কেটে যুবদল নেতা মাহবুব হত্যার ধরন আর বিগত দিনে চরমপন্থিদের খুনগুলোর ধরন প্রায় একই। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম জানান, অতীতে মাদকব্যবসায়ী ও অপরাধীদের তালিকা ছিল পুলিশের কাছে। কিন্তু বর্তমানে তা দেখা যায় না। তালিকা থাকলে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো যায়।
পুলিশের বক্তব্য : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর ভেঙে পড়া পুলিশি মনোবল চাঙা করে মাঠে সক্রিয় হওয়াটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এখন মাঠে বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সক্রিয়। তিনি বলেন, চলতি বছরের ছয় মাসেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকা নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী নুর আজীম, জিতু, হাড্ডি সাগর, আলী নূর ডাবলুসহ ৫২ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছ থেকে শর্টগানসহ ১৮টি আগ্নেয়ান্ত্র সাতটি ম্যাগজিন, ১০৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অর্জন পুলিশের সক্রিয়তার প্রামাণ বহন করে। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুলিশ তার দায়িত্ব শতভাগ পালনে চেষ্টা করছে। মাঠে সক্রিয় আছে।