প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানকে স্ব-স্ব জায়গা থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি গতকাল নারী সংস্কার কমিশন বাতিল, হেফাজত কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর পাশে সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর শাখা এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। মামুনুল হক বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূস সাহেব জাতির অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমাদের সেনাপ্রধান বাংলাদেশের অন্যতম স্তম্ভ। যার যার জায়গা থেকে আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। আপনাদের মান-অভিমান এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্নকে ফিকে হতে দিতে পারে না। মানুষের অনেক স্বপ্ন। অনেক মায়ের চোখের পানি এখনো শুকায়নি। শহীদের রক্তের দাগ রাজপথ থেকে মুছে যায়নি। ক্ষমতা নিয়ে হানাহানিতে জড়িয়ে পড়া আমাদের জন্য সমীচীন নয়।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্কার কাজ সম্পন্ন করুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করুন। হেফাজতের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা চার দফা দাবি না মানলে আবারও শাপলা চত্বরের মতো বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রতিটি ঘরে নারীর ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলন আমরা গড়ে তুলব। প্রতিটি ঘরে বাবা-মায়ের উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে নারীদের যেভাবে বঞ্চিত করা হয়, কন্যা সন্তানকে আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে রাষ্ট্র যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে হেফাজতে ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রতিটি ঘরে তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিশ্চিত করবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করার চেষ্টা চলছে। আসুন আমরা হাতে হাত রাখি। জুলাই-আগস্টের চেতনাকে শানিত করে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিই। মামুনুল হক বলেন, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, আলটিমেটাম দিয়ে, টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়ে দেশকে সামনের দিকে অগ্রসর করা সম্ভব না। সবাই সহনশীল অবস্থানে আসুন। প্রত্যেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তায়নের নির্বাচনি ব্যবস্থায় মানুষ বিশ্বাস করে না। এর মাধ্যমে কিছু দুর্বৃত্ত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারে। ভালো মানুষের সংসদ সদস্য হওয়ার ব্যবস্থা নেই। মানুষকে জিম্মি করে মব তৈরি করে একটার পর একটা দাবি আদায়ের যে কালচার শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে এই দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্য বক্তা বলেন, যারা খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসন করতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল পল্টন হয়ে বিজয়নগর পানির টাংকি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে হেফাজতের পক্ষ থেকে যে চারটি দাবি উত্থাপন করা হয় সেগুলো হলো- নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল; শাপলা চত্বর ও জুলাইসহ সব গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা; হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার; ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলমানদের ‘গণহত্যা’ বন্ধ করা।