দুনিয়ার জীবনে মুসলমানদের প্রতিটি কাজই এক একটি আমল। দুনিয়ার এসব আমল অনুযায়ী পরকালে তারা প্রতিদান পাবেন। সৎ আমলের বিনিময়ে মানুষ পরকালে শান্তিময় জীবন লাভ করবেন। বসবাস করবেন চিরকাল আল্লাহর জান্নাতে। এজন্য সৎ আমলগুলো আল্লাহর কাছে গ্রহণ হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা অনেক ত্যাগ-সাধনার মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করেছেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হবে তা কবুল হওয়া। কবুল হওয়ার প্রবল ধারণা করে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং কবুল না হওয়ার ধারণা হলে অনুতপ্ত হওয়া। যাদের রোজা ও সাধনা কবুল হয়েছে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত বিনিময়। যাদের আমল কবুল হবে না তারা পরকালে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। হবেন কঠিন বিপদের সম্মুখীন। এজন্য মুমিন মুসলমানকে তার প্রতিটি আমল আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে পালন করতে হবে। কোনো আমল যেন বিফল না হয় সেদিকে সচেতন থাকতে হবে। অবলম্বন করতে হবে আমল কবুল হওয়ার উপায় উপকরণ।
আমল কবুল হওয়ার জন্য একান্ত জরুরি শর্তগুলোর অন্যতম হলো- যাবতীয় আমল ইখলাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে শুধু আল্লাহর জন্য পালন করা। আমল কবুল হওয়ার প্রবল আশা পোষণ করা। কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আমলের প্রতি গর্ববোধ না করে শঙ্কিত থাকা ও নিজেকে ছোট মনে করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং ভয়ভীতি সহকারে আমল করা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা খোদাভীরুদের পক্ষ থেকেই তো গ্রহণ করেন।’ (সুরা মায়িদাহ-২৭)।
আমল কবুল হওয়ার একটি অন্যতম শর্ত ও বিশেষ উপায় হলো- আমলের ওপর অটল থাকা এবং এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো- যা নিয়মিতভাবে করে যাওয়া হয়, যদিও তা অল্প হয়।’ (বুখারি, মুসলিম)। এ পরিসরে চিন্তা করার বিষয় হলো- আমরা যারা রমজানের রোজা পালন ও ত্যাগ সাধনা করেছি, রমজানের পরেও যদি ভালো আমলের ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে তা রমজানের আমলগুলো কবুল হওয়ার একটি নিদর্শন বহন করবে। অতএব, রমজান পরবর্তী সময়ে নামাজ, দোয়া, জিকির ও তওবা করা এবং যাবতীয় পাপাচার বর্জনের প্রতি সবাইকে বেশি যত্নবান হতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি (ফরজ দায়িত্ব থেকে) অবসর হবে, (নফল ইবাদতের মাধ্যমে) তোমার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করো।’ (সুরা ইনশিরাহ-৭, ৮) মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যারা রমজানের রোজা পালন করবেন এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবেন তারা যেন সারা বছরই রোজা পালন করলো।’ (মুসলিম)।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।