নেই বিদ্যুৎ, নেই গ্যাস, তেল বা লাকড়ি। তবুও হবে রান্না। এ রান্নায় যেমন নেই কোনো জ্বালানি খরচ, হবে না কোনো দূষণ। আর রান্নার এ পরিবেশবান্ধব সমাধান দিতে পারে কয়েক টুকরো আয়না দিয়ে তৈরি সৌরচুল্লি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় ইতোমধ্যে সৌরচুল্লি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানকার বাসিন্দারা খোলা আকাশের নিচে সূর্যের আলোয় এ চুলা বসিয়ে অনায়াসে দিনের রান্না শেষ করে ফেলছে। তারা এটাকে বলছে ‘মিরর কিচেন’ বা ‘আয়না রান্নাঘর’।
বাংলাদেশে সৌরচুল্লির ধারণা বেশ পুরোনো। আশির দশকেই স্কুলে বাচ্চাদের সৌরচুল্লি সম্পর্কে পড়ানো হতো। তবে এ শিক্ষা শুধু পরীক্ষার খাতাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এটা যে রান্নার কাজে জ্বালানি সাশ্রয়ের একটা বড় মাধ্যম হতে পারে তা কখনো আলোচনায়ই আসেনি। এক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো- রান্নার এ ব্যবস্থাটা শুধু দিনের বেলায় খোলা আকাশের নিচেই সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো স্বল্প আয়ের দেশ, যেখানে কোটি মানুষ ছিন্নমূল। তারা রাস্তার ধারে, মাঠেঘাটে, রেললাইনের পাশে, নদীর চরে বসবাস করে। দিনের খোরাকি জোগাড় করার পর রান্নার জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করা তাদের জন্য কষ্টকর। এসব মানুষের রান্নার কাজে পরিবেশবান্ধব উৎকৃষ্ট সমাধান হতে পারে সৌরচুল্লি।
কী এই সৌরচুল্লি? মূলত, এই চুলায় আয়নার বাঁকা প্যানেল ব্যবহার করা হয়। প্যানেলের মাঝখানে রান্নার হাঁড়ি বসানোর জায়গা থাকে। সূর্যের আলো আয়নায় এসে পড়ে প্রতিফলিত হয়ে সরাসরি হাঁড়িতে কেন্দ্রীভূত হয়। ধাতব আয়নাগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে যে সেগুলো সৌরশক্তি সংগ্রহ করে সরাসরি তাপে রূপান্তরিত করে এবং আগুন ছাড়াই দক্ষতার সঙ্গে খাবার গরম করতে পারে। চুলাগুলো খুব উচ্চ তাপমাত্রায় পৌঁছাতে পারে। এ ছাড়া আয়নায় লেন্স ব্যবহার করে এটার ক্ষমতা বাড়ানো-কমানো যায়। বিপুল বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে আউটডোর সুইমিং পুলের পানি গরম করতেও এ আয়না পদ্ধতি ভালো কাজে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।