পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে টানা চার দিন চলা সহিংস বিক্ষোভে পুলিশসহ অন্তত নয়জন নিহত হয়েছে বলে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন। জানা গেছে, সোমবার আশপাশের শহরগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ আঞ্চলিক রাজধানী মুজাফফরাবাদে
জড়ো হওয়ার পর এ বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকারবিরোধী এ বিক্ষোভ কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটেছে। তবে বাইরের দুনিয়াকে ঘটনার ব্যাপকতা সম্পর্কে জানতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিক্ষোভে এ পর্যন্ত তিন পুলিশ সদস্য ও ছয় বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলে গতকাল ইসলামাবাদের দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সোমবার বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সংঘর্ষ থামেনি। বিক্ষোভের কারণে চার দিন ধরে অঞ্চলটির সিংহভাগ অংশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল ও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ওই অঞ্চলে ইন্টারনেট ও ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের দুটি অংশ পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ভূখণ্ডটি নিয়ে দুই দেশ একাধিক যুদ্ধেও জড়িয়েছে। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা অংশটি অনেকের কাছেই আজাদ কাশ্মীর নামে পরিচিত। কাশ্মীরের নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীগুলোর একটি জোটের নেতা শওকত নওয়াজ মির বলেন, ‘অঞ্চলটির রাজনীতিক, আমলা ও অন্য সরকারি কর্মীরা যে অনৈতিক সুযোগসুবিধা ভোগ করে আসছেন বিক্ষোভকারীরা তার বিরোধিতা করছেন।’ তিনি স্থানীয় ইউটিউব চ্যানেল দ্য কাশ্মীর লিঙ্ককে বলেন, ‘যখন আমরা বলি হাসপাতালের জন্য ওষুধ দরকার, তখন তারা বলে তাদের কাছে অর্থ নেই। কিন্তু বিলাসী জীবনযাপনের জন্য তাদের কাছে ঠিকই অর্থ রয়েছে।’
কাশ্মীরের আঞ্চলিক বিধানসভায় পাকিস্তানের অন্য অংশের প্রতিনিধিদের জন্য থাকা কোটা নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ আছে। আঞ্চলিক সরকার বানানো বা ফেলে দিতে অন্য অঞ্চলের এই প্রতিনিধিদের ব্যবহার করা হয় বলে কাশ্মীরি অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন। গত বছরও কাশ্মীরে একই ধরনের বিক্ষোভ-সহিংসতায় চারজন নিহত হয়েছিল। এরপর শাহবাজ শরিফকে আটা ও বিদ্যুতের দামে ভর্তুকিসহ আন্দোলনকারীদের বেশির ভাগ দাবিদাওয়া মেনে নিতে ২ হাজার ৪০০ কোটি রুপি বরাদ্দ দিতে হয়েছিল। এবারের বিক্ষোভ কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সংঘাত-সহিংসতা প্রশমনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর কার্যালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সরকার সব সময় আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের সমস্যার সমাধানে প্রস্তুত।’ এদিকে তাঁর বানিয়ে দেওয়া কমিটির সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে সব ইস্যুর সমাধান হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। সূত্র : রয়টার্স